ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৫৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ
শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধি: জনজীবনে নতুন চাপ
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৫৯ এএম
ছবি: সংগ্রহীত
চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এই সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫, জারি করা হয়। এর মাধ্যমে সংশোধনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে।
আরও পড়ুন
এর আগে ১ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রস্তাব পাস করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে অধ্যাদেশ আকারে এটি কার্যকর করা হয়েছে। সংসদ না থাকায় সরকার এই সিদ্ধান্ত অধ্যাদেশের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করেছে।
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর চাপ
এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "আমাদের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত কম হওয়ার কারণে সরকার রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু পরোক্ষ কর সাধারণ মানুষের ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে।"
তিনি আরও বলেন, "তামাক ও মদের ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি যৌক্তিক হলেও পোশাক ও রেস্তোরাঁর মতো খাতে শুল্ক বৃদ্ধি মধ্যবিত্তের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলবে।"
ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব
- মুঠোফোন সেবা: সিম বা রিমকার্ড ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়েছে। এর ফলে ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ বাড়বে।
- রেস্তোরাঁ: রেস্তোরাঁর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এতে শহুরে পরিবারগুলোর জন্য খাওয়ার খরচ বেড়ে যাবে।
- পোশাক: ব্র্যান্ডেড দোকান থেকে পোশাক কিনতে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে।
- টিস্যু ও টেইলারিং: টিস্যু এবং দরজির দোকানে পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে ভ্যাট দ্বিগুণ বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে।
আমদানি ও স্থানীয় পণ্য
- আমদানি করা ফল (আপেল, আঙুর, আম, কমলালেবু), ফলের রস, এবং সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বেড়েছে।
- স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তামাকজাত পণ্য, রং, মদ, পটেটো ফ্ল্যাকস, এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে।
ভ্রমণের খরচ
- নন-এসি হোটেলে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হয়েছে।
- আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রুটে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বেড়ে ৭০০ টাকা এবং আন্তর্জাতিক রুটে (সার্ক ও অন্যান্য) ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কর ব্যবস্থার সংস্কারের প্রস্তাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সরাসরি কর বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া উচিত। ভ্যাটের হার সরলীকরণ এবং কর সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনে নজর দেওয়া হলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমানো সম্ভব হবে।
সরকারের এই উদ্যোগ রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য জরুরি হলেও, এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরবর্তী বাজেটে কর ব্যবস্থা সংস্কারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।
- ট্যাগ সমূহঃ
- বাংলাদেশ
- ভ্যাট
- শুল্ক বৃদ্ধি
- মূল্য সংযোজন কর
- জনজীবন
- মূল্যস্ফীতি
- এনবিআর