ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ১২:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
শিপিং কর্পোরেশন ধীরে ধীরে শূন্য হচ্ছে জাহাজ
৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ১২:৩৩ পিএম
![শিপিং কর্পোরেশন ধীরে ধীরে শূন্য হচ্ছে জাহাজ](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/05/20241005123302_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দ্রুত বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশের বেসরকারি শিপিং খাত। কিন্তু সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে উল্টো কমছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবহার সক্ষমতা।
একসময় বিএসসির বহরে ৪৪ টি জাহাজ ছিল। অথচ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে মাত্র দুটিতে। ২০১৯ সালে ছয়টি নতুন জাহাজ যুক্ত হলেও গত পাঁচ বছরে একটি জাহাজও যুক্ত হয়নি।
সবশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাইটার জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতি। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হন।
৩৭ বছরের পুরোনো জাহাজটি পুনরায় বহরে যুক্ত হতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা গিয়েছে। বিএসসির বহরে থাকা আরেকটি লাইটার জাহাজ এমটি বাংলার সৌরভও ৩৭ বছরের পুরোনো। বাংলার জ্যোতির দুর্ঘটনার পর বাংলার সৌরভ দিয়ে তেল পরিবহন কতটুকু নিরাপদ, সেটি নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে ৭৯টি। ২০১৮ সালের আগে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ছিল ২৩টি।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) আইন, ২০১৯ প্রণয়নের পর একে একে বাড়তে থাকে এই খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ। নতুন কোম্পানিও যুক্ত হয় শিপিং ব্যবসায়। ২০২৪ সালে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
শিপিং খাতসংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্র পরিবহন বাণিজ্যে শুধু বাংলাদেশি আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের বাজার প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের। যার বেশিরভাগই বিদেশি জাহাজ মালিকদের পকেটে চলে যায়।
প্রতি বছর শিপিং কর্পোরেশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনার ঘোষণা দেওয়া হয়। গত দুটি বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্ক কন্টেইনার ও কন্টেইনার ক্যারিয়ারসহ আরও ২০টি জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
বর্তমানে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, বে টার্মিনালসহ বন্দর ঘিরে নানা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তাবয়ন হলে পণ্য পরিবহন বাড়বে। বিএসসির বহরে দ্রুত জাহাজ বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি এই খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহন বাণিজ্যে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা এখনও আছে। কিন্তু সরকারি সংস্থা হয়েও বিএসসি সেভাবে এগোতে পারেনি। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। আমাদের প্রত্যাশা, বিএসসি নতুন জাহাজ কেনার যেসব পরিকল্পনা করছে, সেগুলো সেগুলোর সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করবে।'
ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাতের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, ১৯৮৭ সালে নির্মিত জাহাজ দুটির আয়ুষ্কাল প্রায় ৩৭ বছর। অর্থাৎ জাহাজগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে।
ত্রর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৩৭ বছর বয়সি এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভকে তেল পরিবহনে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন জাহাজ কেনার আগপর্যন্ত বিপিসির ক্রুড তেল পরিবহনের জন্য চার্টার্ড জাহাজ ব্যবহার করবে বিএসসি।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক টিবিএসকে বলেন, 'বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শিল্পের দুরবস্থা থেকে উত্তরণে বড় বাধা।'
এদিকে তদন্ত কমিটি আমদানিকৃত ক্রুড তেল খালাসের জন্য ডাবল পাইপলাইনসহ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) অবিলম্বে চালু করার সুপারিশ করেছে। এছাড়া বাকি লাইটার জাহাজগুলোর ব্যবহারের উপযুক্ততা নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কারিগরী কমিটি গঠনের সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি।
জাহাজের সংকটের কারণে এখন ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) জন্য আমদানি করা তেল খালাস কার্যক্রম।
বিপিসির তথ্যমতে, আমদানি করা ক্রুড তেলবাহী মাদার ভেসেলে (বড় জাহাজ) নোঙর করে কুতুবদিয়া আউটার অ্যংকরেজ এলাকায়। প্রতিটি জাহাজে অন্তত ১ লাখ টন তেল থাকে। গভীরতা কম থাকায় এই জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে না।
এক্ষেত্রে এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভের মতো লাইটার জাহাজগুলো কুতুবদিয়া থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারির ডলফিন অয়েল জেটিতে তেল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওযায় এখন বাংলার সৌরভ জাহাজ দিয়ে তেল খালাস কার্যক্রম চলবে। এর ফলে তেল খালাসে বিলম্ব হবে। ফলে দৈনিক ২০ হাজার ডলারের বেশি জাহাজের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে বিপিসিকে।
বিপিসির পরিচালক কবির মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, 'আপাতত আমরা একটি লাইটার জাহাজ দিয়ে তেল খালাস চালু রেখেছি। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ঠিক করে অপারেশন চালানো যাবে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। যদি জাহাজটি চলাচল উপযোগী না হয়, তাহলে আরেকটি জাহাজ চার্টারিংয়ের বিষয়ে আমরা বিএসসির সাথে আলোচনা করব।'
![শিপিং কর্পোরেশন ধীরে ধীরে শূন্য হচ্ছে জাহাজ](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)