ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
শিল্পের পর আবাসিকেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০ পিএম
![শিল্পের পর আবাসিকেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/02/13/20250213153353_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
শিল্পে প্রায় দ্বিগুণ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পর এবার কৌশলে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ৩ বিতরণ কোম্পানি। ২০২৩ সালেই আবাসিক গ্রাহকদের বিল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে তিতাস গ্যাস। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের বিল বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব অনুমোদন হলে মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকদের মাসের বিল প্রায় ৩০০ টাকার মতো বেড়ে যাবে। বিইআরসিতে দাখিলকৃত প্রস্তাবে বলেছে, সকল মিটারবিহীন গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী-২০১৪ অনুযায়ী একক ও দুই চুলার গ্যাস ভোগ নির্ধারণ করা হলে তা প্রকৃত গ্যাস ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। গ্যাস বিপণন নিয়মাবলীতে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার বিলের কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করুক বা না করুক অথবা বেশি ব্যবহার করলেও নির্ধারিত পরিমাণ গ্যাসের বিল আদায় করা হয়। বিইআরসি সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয় ২০২২ সালের ৫ জুন। ওই আদেশের পূর্বে গণশুনানি গ্রহণ করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে এক চুলা ৪০ এবং দুই চুলা সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার ব্যবহার করছে। প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়।
একাধিক বিতরণ কোম্পানি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথা বলেছে। ওই প্রস্তাব কার্যকর হলে এক চুলার বিল ৯৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩২১ টাকা এবং দুই চুলা ১৩৯৩ টাকা হবে। অন্যদিকে তিতাস গ্যাস ২০২৩ সালে বিদ্যমান এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার (৯৯০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ঘনমিটার দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার (১০৮০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ঘনমিটার করার আবেদন দিয়ে রেখেছে। বিইআরসি সেই প্রস্তাব দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে সম্প্রতি তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রেখে নতুন শিল্প কারখানার বয়লার ও জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। বিদ্যমান গ্রাহকদের অপরিবর্তিত রেখে প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এরপর বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিইআরসিতে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি গণশুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে বিইআরসি।
শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কার্যকর হলে উৎসে কর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসানের মুখে পড়বে বলে তা সামাল দিতে কৌশলী উদ্বেগ জানিয়েছে।
বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাবে বলেছে, আয়কর আইন-২০২৩ এবং উৎসে কর বিধিমালা-২০২৩ এর ধারা-০৩ (সংশোধনী) অনুযায়ী যে কোন পরিমাণ বিক্রি গ্যাসের বিল হতে ভ্যাট ব্যতিত অর্থের ওপর ২ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী ভোক্তা কর্তৃক কোম্পানির গ্যাস বিল হতে ২ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তৃন করে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করছে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে উৎসে কর কর্তনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে কোম্পানির কর দায় অপেক্ষা উৎসে আয়কর অধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে ট্যারিফ পরিবর্তের প্রস্তাব অনুমোদিত না হলে কোম্পানিতে এ ধরণের আর্থিক প্রভাব থাকবে না। তবে পেট্রোবাংলাকে সরকারের অর্থ বিভাগ হতে সমপরিমাণ অর্থ ভর্তুকি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ছাড়া অন্যান্য কোম্পানি সিস্টেম লস যৌক্তিক করার আবেদন করেছে। বিইআরসির ২০২২ সালের আদেশে সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি সিস্টেম লস দিয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির সামগ্রিক সিস্টেম লস ছিল ১০.০৬ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে যথাক্রমে তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস ৭.৬৭ শতাংশ, কর্নফুলী গ্যাসের ৩.২১ শতাংশ, জালালাবাদ .৬৮ শতাংশ। অন্যদিকে সিস্টেম গেইন করেছে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে বিতরণের দায়িত্বে থাকা পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি বিদায়ী অর্থবছরে ১.৯৬ শতাংশ সিস্টেম গেইন করেছে।
বাখরাবাদ, তিতাস, জালালাবাদ ও কর্নফুলী তাদের সিস্টেম লস যৌক্তিক করার দাবি করেছে। ঠিক কতো হওয়া উচিত সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি প্রস্তাবে।
এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ গণমাধ্যমকে জানান, মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকরা অনেক বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। বর্তমানে একক চুলা ৫৫ ঘনমিটারের বিল ও দুই চুলা ৬০ ঘনমিটারের বিল আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ ঘনমিটার পর্যন্ত গ্যাস ব্যবহারের রেকর্ড রয়েছে। তাই আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়ানো জরুরি।
তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী ও ননমিটার গ্রাহকের ব্যবহারের মধ্যে অনেক তারতম্য রয়েছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারি গ্রাহক অনেকটা মিতব্যায়ী হন। তাই তাদের ব্যবহারের পরিমাণ অনেক কম হয়ে থাকে। প্রিপেইড মিটার রয়েছে অভিজাত এলাকায় তারা অনেক সময় হোটেল-রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে তুলনা করলে চলে না।
![শিল্পের পর আবাসিকেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)