ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২১:৪৮ পিএম

শিল্প-কারখানায় বিধ্বংস: উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা

সংবাদ সম্মেলনে আইসিসি বাংলাদেশ

৮ আগস্ট, ২০২৪ | ৮:২২ এএম

শিল্প-কারখানায় বিধ্বংস: উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা

ছবি: সংগ্রহ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এমন অরাজক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তিন বাহিনী প্রধানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের নেতারা।

 

 

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কারেন্ট সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইসিসিবি। এতে অংশ নেন সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি এ কে আজাদ ও নাসের এজাজ বিজয়। এ সময় আইসিসিবির নির্বাহী পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল হাই সরকার, আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ হাতেম, সিমিন রহমান ও তপন চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান, ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হিলালী, আইসিসিবির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান এবং বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

 

 


সংবাদ সম্মেলনে আইসিসি বাংলাদেশের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, গত দুই দিনের অরাজক পরিস্থিতিকে প্রতিবেশী দেশের পক্ষ থেকে আরো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এতে বিদেশী ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ইমেজ সংকট বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে।

 

 

সংবাদ সম্মেলনে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশের বেসরকারি খাত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি পুনর্নির্মাণে কাজ করে যাবে।’

 

 

তিনি আরো বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের মাধ্যমে এ ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের জন্য সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। শিক্ষক-জনতার সংহতিতে এ আন্দোলন বেগবান হয়। শত শত ছাত্র, শিশু এবং নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করছি।’

 

 

সহিংসতায় নিহতদের শহীদের মর্যাদা প্রদান এবং তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং যদি কেউ পঙ্গু হয়ে থাকেন তাদের পুনর্বাসন করা; দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে সব কলকারখানার উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

 

 

আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, ‘গত এক মাসে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরে চলা লুটপাটের কারণে অর্থনীতিতে দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। অতএব সবাই মিলে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।’

 

 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরসহ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে উল্লেখ করে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত ও জোরদার করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত, তাই এ খাতের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।’

 

 

আলোচনায় আইসিসিবির সহসভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার আসবে, সেটি পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা উৎপাদন ও রফতানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তাদের ঘণ্টা-মিনিট হিসাব করে কাজ করতে হয়। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন কারখানায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কারখানা চালাতে পারছি না।’

 

 

এ কে আজাদ আরো বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চারটি বিষয় বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। এগুলো হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, কারখানা চালুর ব্যবস্থা করা, মানুষের জীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং থানা ও পুলিশকে সক্রিয় করা।’

 

 

ব্যবসায়ীদের এ নেতা জানান, আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং কারখানার নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। গত রাতে তিনি সেনাপ্রধানসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি সেনাবাহিনীর এ সহযোগিতা চেয়েছেন।

 

 

আইসিসিবির নির্বাহী পর্ষদের সদস্য তপন চৌধুরী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ছাত্র-জনতার ত্যাগের অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। বিদেশী ক্রেতারা উদ্বেগ জানাচ্ছেন। এ দেশে নিরাপত্তা এবং সময়মতো পণ্য হাতে পাবেন কিনা তা নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা রয়েছে।’

 

 

এ মতিন চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করতে পারছে না। কারখানায় পণ্যের স্তূপ পড়ে আছে। ক্রেতারা তাদের রফতানি আদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ অংশ হিসেবে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে।’ তবে পরিস্থিতি যদি দ্রুত শান্ত হয়, তাহলে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।

 

 

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার বলেন, ‘বায়াররা ক্রমাগত আমাদের কাছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে। বর্তমান সিচুয়েশন দীর্ঘায়িত করা যাবে না। তবে যদি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করা যায়, আইন-শৃঙ্খলা ঠিক করা যায় তাহলে আমরা কভার করতে পারব।’

শিল্প-কারখানায় বিধ্বংস: উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা