ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:৩৬:১৫ পিএম

শীতে সময় গ্যাসের সংকট বারতে পারে

২৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৬ এএম

শীতে সময় গ্যাসের সংকট বারতে পারে

ছবি: সংগ্রহ

ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে সীমিত জোগানের কারণে গ্যাস সংকটের মধ্যে আছে দেশ। গ্যাস সরবরাহের অভাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। শিল্পাঞ্চলগুলোতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না।



এ ক্ষেত্রে সংকট সমাধানের সাময়িক উপায় হচ্ছে এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ বাড়ানো। তবে আর্থিক সংকটের কারণে এলএনজি আমদানিও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। কিন্তু এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখা না গেলে আগামী শীতে গ্যাস সংকট আরও প্রকট হতে পারে।

 

পেট্রোবাংলা বলছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ১১ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। তবে এ পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে হলে সরকারকে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

 

গ্যাস উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের একাধিক সংস্থা ও কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের সঙ্গে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে সেটা গড় গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য। এই আমদানির মাধ্যমে দেশে গ্যাসের যে চাহিদা রয়েছে, তা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব হবে না।

 

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে অন্তত ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলন ও আমদানিকৃত এলএনজি মিলিয়ে প্রতিদিন ২৯শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। ফলে দৈনিক প্রায় ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে। শীত এলে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়বে। কাজেই সরবরাহ না বাড়ালে ঘাটতি আরও বাড়বে।

 

এলাকা থেকে মানুষ গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ আসছে। কোনো কোনো শিল্পাঞ্চল থেকেও এমন অভিযোগ আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এক্ষেত্রে তিতাসের কিছুই করার নেই। পেট্রোবাংলা থেকে সরবরাহ না পেলে গ্যাস দিতে পারবে না তিতাস। পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়লে তিতাসও সরবরাহ বাড়াতে পারবে।

 

পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল রবিবার ২৮শ ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় উৎসগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ৫৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, সিলেট গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ১২৮ মিলিয়ন ঘনফুট, বাপেক্সের আওতাধীন গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে উত্তোলিত গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ১১শ ৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেভরন জালালাবাদ, বিবিয়ানা, ও মৌলভীবাজার গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহ করেছে। এছাড়া তাল্লু গ্যাসক্ষেত্র থেকেও গ্যাসের সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করেছে।

 

আসন্ন শীতে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য থাকায় মূলত গ্যাসের সংকট আছে। আর শীতে সব সময়ই গ্যাসের চাহিদা বেশি থাকে। গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যায়। ফলে শীতে সংকটটা প্রকট মনে হয়। তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে আছে দেশি গ্যাসের সরবরাহের সঙ্গে বিদেশ থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ১১ কার্গো এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করা হবে। তবে সেটাও হয়তো চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত হবে না। তিনি বলেন, আশা করছি অন্যান্যবার শীতে গ্যাসের সরবরাহ যেমন থাকে এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প, সার ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য ১৬ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। অক্টোবর মাসে স্পট মার্কেট থেকে ৫ কার্গো এলএনজি ক্রয় করার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। সার্বিক বিবেচনায় আন্তর্জাতিক ক্রয়ে কোটেশন দেওয়ার আহ্বান করা হয়।

 

তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিষ্ঠান কোটেশন দাখিল না করায় ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ কোটেশনসমূহ বাতিল করে। পরে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের ক্রয়ের প্রস্তাব পুনরায় কোটেশন আহ্বান করে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যে ১১টি কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, সেটি সম্ভব হলে সংকট অনেকটা কমবে।

 

 

এদিকে গ্যাসের সামগ্রিক সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেন্বর পর্যন্ত গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে অন্তত ১০৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে হবে। পেট্রোবাংলা হিসাব করে দেখেছে, এতে অন্তত ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। তিনি বলেন, অর্থের জোগান নিশ্চিত হলে পেট্রোবাংলা গ্যাস আমদানি করে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে।

 

তবে পেট্রোবাংলা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বিশাল পরিমাণ টাকা পাওনা রয়েছে সেগুলো সময়মতো পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ কর্মকর্তা বলেন, পেট্রোবাংলা যাদের গ্যাস সরবরাহ করে তারা যদি নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করে, তবে পেট্রোবাংলা আমদানি করে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে। বেসরকারি গ্রাহকদের কাছে পেট্রোবাংলার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া আছে বলে সাম্প্রতিক এক আলোচনায় তিনি সাংবাদিকদের জানান।

শীতে সময় গ্যাসের সংকট বারতে পারে