ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬:৪০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
শেয়ারবাজারে কারসাজিতে ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করা সাকিবের জরিমানা ৫০ লাখ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬:৪০ এএম

ছবি: সংগ্রহ
শেয়ার ব্যবসায়ে কারসাজির মাধ্যমে ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করে এখন ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারকে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ জরিমানা করেছে।
বিএসইসির এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে সংঘটিত কারসাজিতে যুক্ত ছিলেন সাকিব আল হাসান। শেয়ারবাজারে যে বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) ব্যবহার করে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়, সেটি সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারের নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসে খোলা হয়েছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসইসি সাকিব আল হাসান, শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরুসহ কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় ওই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ডিএসই। গত বছরের ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা তদন্ত করে।
প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারসহ সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। জরিমানা করা অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হলো ইশাল কমিউনিকেশন, আবুল খায়ের হিরু, আবুল খায়ের হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতলুব, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট, লাভা ইলেকট্রোডস ও জাহিদ কামাল। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ইশাল কমিউনিকেশনকে।
ডিএসইর তদন্ত ও বিএসইসির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সাকিব আল হাসান ও তাঁর মায়ের বিও হিসাবে মাত্র তিন দিনে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ১০ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার কেনা হয়। এসব শেয়ারের গড় ক্রয়মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২৪ পয়সা। এ জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। গত বছরের ১২, ১৪ এ ১৭ সেপ্টেম্বর ভিন্ন ভিন্ন দামে এসব শেয়ার কেনা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ২১ হাজার শেয়ার কেনা হয় ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর। এই দুই দিনে কেনা সব শেয়ারই পাঁচ দিনের ব্যবধানে বিক্রি করে দেন সাকিব আল হাসান। তাতে প্রতি শেয়ারে প্রায় ৯ টাকা করে মুনাফা হয়। সব মিলিয়ে মুনাফা দাঁড়ায় ৯০ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটির আরও ৪০ হাজার শেয়ার অবিক্রীত ছিল সাকিবের বিও হিসাবে। তাতে ওই শেয়ারে আনরিয়ালাইজড বা অনর্জিত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ টাকা।
শুনানিতে সাকিবের পক্ষে আবুল খায়ের হিরু বলেন, কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিমা খাতের ভালো কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স একটি। ধারাবাহিকভাবে এটির ব্যবসায়ে প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে। এমন বিবেচনায় কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ারে বিনিয়োগ করেন সাকিব আল হাসান। তারপরও কেন কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগকে কারসাজি বলা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। শেয়ারবাজারে মানুষ বিনিয়োগ করে মুনাফার জন্য, এটি বিনিয়োগকারীদের অধিকারও।
তবে বিএসইসির শুনানিতে সাকিবের পক্ষে দেওয়া এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থী। এ কারণে সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।
