ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৫৭:০২ পিএম

শ্বাস আটকে যাচ্ছে দিল্লিবাসীর

২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৬ এএম

শ্বাস আটকে যাচ্ছে দিল্লিবাসীর

ছবি: সংগ্রহ

প্রতি বছরই শীতের শুরুতে বিশ্বের যে শহরগুলো বায়ুদূষণে শীর্ষে থাকে তার মধ্যে অন্যতম স্থানের অধিকারী হয় ভারতের রাজধানী। এবার নয়াদিল্লি দখল করেছে শীর্ষস্থান।

 

শীতকালে দিল্লির বায়ুদূষণ এতটাই ভয়াবহ পর্যায়ে থাকে যে, বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এসময় দিল্লির হাসপাতালগুলোতে ক্রমান্বয়ে দূষণজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এ বছরও দিল্লিতে একই চিত্র বিরাজ করছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে দিল্লির লাখ লাখ মানুষ। ঠিকমতো শ্বাসই নিতে পারছে না দিল্লিবাসী, দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের।

 

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত নগরী দিল্লির হাসপাতালে শ্বাসকষ্টে জীবন-মরণ সংগ্রাম করছেন দীপক রাজাক নামে এক ব্যক্তি।

 

সম্প্রতি শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ৬৪ বছর বয়সি রাজাককে হাসপাতালে নিয়ে যান তার মেয়ে কাজল। দ্রুত স্বাস্থ্যের অবনতিতে উদ্বিগ্ন তার পরিবার। সিএনএনকে রাজাক জানিয়েছেন, সম্প্রতি শ্বাসকষ্টের সঙ্গে তার কাশি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিশ্বাস নেওয়াই এখন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বাসে করে হাসপাতালে আসার সময় তার দমবন্ধ হয়ে আসছিল বলেও জানিয়েছেন রাজাক। শুধু বায়ুদূষণে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রাম মনোহর লোহিয়া (আরএমএল) নামের একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছে দিল্লির সরকার।

 

হাসপাতালটির এক চিকিৎসক জানিয়েছেন বছরজুড়ে এই হাসপাতালে রোগী থাকে তবে শীতে তা দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়।

 

দিল্লির পরিবেশ এতটাই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন যে সেখানে দিনকেও রাত মনে হয়। অব্যাহতভাবে বিমানের ফ্লাইট বিলম্বের শিকার হচ্ছে। বড় বড় স্থাপনাগুলো একেবারেই অদৃশ্য হয়ে যায়। দিল্লির বায়ুর মানের এমন বিপর্যয়ে সেখানের লাখ লাখ নগরবাসীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গত মাস থেকে ক্রমান্বয়ে দিল্লির পরিবেশ খারাপ হতে থাকায় সেখানে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বৈশ্বিক বায়ুর মান মনিটর অনুসারে, গত সপ্তাহ পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো অঞ্চল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এতটা বিপজ্জনক হয়নি দিল্লির বায়ুর মান যতটা খারাপ হয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রী আতিশি মারলেনা স্কুল বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।

 

তবে জীবিকার তাগিদে ঘরে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রাজাক। পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলছে তাদের পরিবার। সিএনএনকে তিনি বলেছেন, আমাকে কাজের জন্য বাসার বাইরে যেতে হয়, এখন আমি কী করব? যদি অর্থ উপার্জন না করি তা হলে খাব কী? আমি যখন বাড়ির বাইরে যাই আমার শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। সন্ধ্যার সময় মনে হয় আমি প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছি।

 

ইতিমধ্যেই রাজাককে একবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু এখন যদি আবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তা হলে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হিমশিম অবস্থার মধ্যে পড়বে তার পরিবার। রাজাকের মেয়ে কাজল বলেন, বাইরের পরিবেশ এতটাই বাজে যে আপনার সামনে কী রয়েছে তা স্পষ্ট করে দেখতে পারবেন না। আমরা বাসস্টপে দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু বাসের নাম্বার দেখতে পাচ্ছিলাম না। এ ছাড়া সড়কে পরিবহন কোন দিক থেকে আসছে তা দেখতেও আমাদের প্রবল বেগ পেতে হয়।

শ্বাস আটকে যাচ্ছে দিল্লিবাসীর