ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২১ অক্টোবর, ২০২৪ | ৪:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সংবাদপত্রের উপর করের বোঝা: ১ শতাংশ আয়কর দেয় সংবাদপত্র
২১ অক্টোবর, ২০২৪ | ৪:৪৯ পিএম
![সংবাদপত্রের উপর করের বোঝা: ১ শতাংশ আয়কর দেয় সংবাদপত্র](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/21/20241021164735_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দেশের মাত্র ছয়টি দৈনিক সংবাদপত্র নিয়মিত আয়কর দেয়, যা মোট সংবাদপত্র সংখ্যার ১ শতাংশ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) গত আগস্ট মাসের হিসাব অনুসারে, বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে ৫৮৪টি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এই ছয় সংবাদপত্র বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা ও আয়কর দিয়েছে। আরও ২২টি সংবাদপত্র রিটার্ন জমা দিয়েছে। তবে তাদের করযোগ্য আয় ছিল না। সব মিলিয়ে রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৮টি সংবাদপত্র।
সর্বশেষ অর্থবছরে আয়কর দেওয়া সংবাদপত্রগুলো হলো প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, সমকাল, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, বাংলাদেশ প্রতিদিন (ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ) এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, করপোরেট কর হিসেবে প্রতিবছর গড়ে ২৫ কোটি টাকা কর দেয় ওই ছয় সংবাদপত্র।
প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টার লিমিটেড বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) নিবন্ধিত। গণমাধ্যম শ্রেণিতে এই প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ কর দেয়। বাকি সংবাদপত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো কর অঞ্চল-৫ এর নিবন্ধিত করদাতা।
গতবার যেসব সংবাদপত্র রিটার্ন দিয়েছে, ওই তালিকায় আছে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, সমকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, দ্য সান, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ঢাকা ট্রিবিউন, নিউ এজ, ইত্তেফাক, যায়যায়দিন, মানবজমিন, দিনকাল, নয়া দিগন্ত, ভোরের কাগজ, ইনকিলাব প্রভৃতি। আরও কিছু সংবাদপত্র অনিয়মিতভাবে রিটার্ন জমা এবং করযোগ্য আয় থাকলে তার ওপর কর দেয়।
বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবাদমাধ্যম তথা সংবাদপত্রের জবাবদিহির মধ্যে আসা উচিত। কারণ, সংবাদপত্রের অন্যতম ভূমিকা হলো রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। সেই গণমাধ্যম নিজেরাই কর দেয় কি না, আয়-ব্যয়ের তথ্য সঠিক কি না, মালিকানার স্বচ্ছতার অভাব আছে কি না, এসবই হলো গণমাধ্যমের মৌলিক ভূমিকার পূর্বশর্ত।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে এক লাখ কপির বেশি প্রচারসংখ্যা দেখিয়েছে ৫৭টি দৈনিক সংবাদপত্র।
গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) সব মিলিয়ে মাত্র ২৮টি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগের অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানিয়ে আয়কর বিভাগে রিটার্ন জমা দিয়েছে। সেই হিসাবে, ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে ৬ শতাংশ সংবাদপত্র রিটার্ন জমা দেয়। বাকি ৯৪ শতাংশ সংবাদপত্র রিটার্ন দেয়নি।
বর্তমানে ঢাকা জেলা থেকে সর্বোচ্চ ২৮৪টি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ঢাকা জেলা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোকে কর অঞ্চল-৫ এ নিবন্ধিত হতে হয়। কিন্তু চার ভাগের তিন ভাগ সংবাদপত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেই। জানা গেছে, ঢাকার কর অঞ্চল-৫ এ ৬৭টি প্রতিষ্ঠানের টিআইএন আছে। এর মধ্যে মাত্র ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র সর্বশেষ অর্থবছরে রিটার্ন দিয়েছে।
করযোগ্য আয় না থাকলেও রিটার্ন জমা দেওয়ার কারণ হলো ডিএফপির কাছে এক লাখ কপির বেশি প্রচারসংখ্যা দাবি করা হলে সংবাদপত্রের আয়কর পরিশোধসংক্রান্ত সনদ থাকতে হয়। প্রচারসংখ্যা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের মূল্যহার নির্ধারিত হয়। শুল্কছাড় সুবিধায় নিউজপ্রিন্ট বেশি আমদানি করতেও কোনো কোনো সংবাদপত্র মালিক এক লাখের বেশি প্রচারসংখ্যা দেখান বলে অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে এক লাখ কপির বেশি প্রচারসংখ্যা দেখিয়েছে ৫৭টি দৈনিক সংবাদপত্র।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সংবাদপত্র ও সাময়িকীর মিডিয়া তালিকাভুক্তি ও নিরীক্ষা নীতিমালা, ২০২২ প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, দৈনিক সংবাদপত্রকে সরকারি তালিকাভুক্তি বা মিডিয়া তালিকাভুক্তি; নিরীক্ষা পদ্ধতি; নিউজপ্রিন্ট প্রাপ্যতার হিসাবসহ বিভিন্ন কাজে আয়কর–সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করতে হয়।
সেবাধর্মী খাত হওয়া সত্ত্বেও সংবাদপত্রশিল্পে শুল্ক-কর হার তুলনামূলক বেশি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সংবাদপত্রের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এআইটি) রয়েছে। সব মিলিয়ে করভার প্রায় ২৭ শতাংশ। নিউজপ্রিন্টের আমদানিমূল্য, করসহ মোট ব্যয় বা ল্যান্ডেড কস্ট দাঁড়ায় ১২৭ শতাংশ। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ হয়।
সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ (যা চূড়ান্ত কর দায়) এবং কাঁচামালের ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে অগ্রিম আয়কর দিতে হয় ৯ শতাংশ। অথচ অধিকাংশ সংবাদপত্রের মোট আয়ের ৯ শতাংশ মুনাফা থাকে না বলে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। তাই দীর্ঘদিন ধরেই সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতারা সংবাদপত্রশিল্পের করপোরেট করহার ১০-১২ শতাংশের মধ্যে রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন। বর্তমানে সংবাদপত্রের ওপর করপোরেট করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ।
২০১৪ সালে সরকার সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেয়। কিন্তু গত এক দশকে সংবাদপত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো কর–সুবিধা পায়নি বললেই চলে।
এ কে আজাদ বলেন, ‘একদিকে বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমছে, অন্যদিকে করের বোঝা। এর মধ্যে সরকারি বিজ্ঞাপন বাবদ সব সংবাদপত্র মিলিয়ে সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। এসব পাওনা পরিশোধে সরকারের দিক থেকে আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাচ্ছি না। বকেয়া বিল পরিশোধের বিষয়ে বর্তমান সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
- ট্যাগ সমূহঃ
- আয়কর
![সংবাদপত্রের উপর করের বোঝা: ১ শতাংশ আয়কর দেয় সংবাদপত্র](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)