ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:২৫:০৮ পিএম

সরকারি কেনাকাটায় ১০% মার্জিন বাতিলের সিদ্ধান্ত

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১২:৫৫ পিএম

সরকারি কেনাকাটায় ১০% মার্জিন বাতিলের সিদ্ধান্ত

ছবি: সংগ্রহ

সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ায় উদ্বৃত দরের ১০ শতাংশ কম বা বেশি দাম প্রস্তাব করলে দরপত্র বাতিল হওয়ার বিধান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হলে সরকারি কেনাকাটা প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে, পাশাপাশি নতুন ঠিকাদারদের জন্য সুযোগ তৈরি হবে এবং বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার শর্ত পূরণের একটি অংশ হিসেবে এটি নেওয়া হয়েছে।

 


সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত 'আইডেন্টিফাইং লিমিটেশনস এন্ড ডিটারমাইনিং হোয়াট টু ডু ইন এপ্লাইয়িং দ্য রুলস এন্ড রেগুলেশনস অফ পিপিএ ২০০৬ এন্ড পিপিপিআর ২০০৮' শিরোনামের সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পূর্ত ও প্রকৌশল কাজ করা সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীরা।

 

অতিরিক্ত সচিব ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এই বিধান বাতিলের মাধ্যমে ঠিকাদারদের মধ্যে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হবে, এবং দীর্ঘদিন ধরে একই ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ কমবে। এছাড়া, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে সরকারের ক্রয় কার্যক্রম আরও দক্ষ হবে।

 


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের দরপত্র প্রক্রিয়ায় এই ১০ শতাংশের বিধান থাকায় বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতি সংঘটিত হতো। তিনি বলেন, "বিভিন্ন কর্মকর্তার যোগসাজশের মাধ্যমে কিছু ঠিকাদাররা অবৈধ সুবিধা পেতেন, যা প্রক্রিয়াটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছিল।" তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র এই বিধান বাতিল করলেই সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আসবে না, পুরো আইন পর্যালোচনা করে যথাযথ সংস্কার আনতে হবে।

 


তিনি জানান, ই-জিপি সিস্টেম চালু হওয়ার পরও কিছু ক্ষেত্রে অপব্যবহার হচ্ছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও এর আওতায় কেনাকাটা করছে না। তিনি বলেন, "সরকারি কেনাকাটায় ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা হবে।" এটি নিশ্চিত করতে সরকার আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

 


বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা আশফাকুর রহমান জানান, ১০ শতাংশের বিধান বাতিলের পর অস্বাভাবিক নিম্নদরের প্রস্তাবের ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য একটি কারিগরি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, বিপিপিএ ২০২১ সাল থেকে পিপিএ ২০০৬ আইন সংশোধন করার জন্য কাজ করছে, এবং এই সংশোধনের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

 


অর্থ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বব্যাংক থেকে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) সহায়তার আওতায় বাংলাদেশের সরকার আর্থিক, রাজস্ব ও জনসেবা খাতে বিভিন্ন পলিসি সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি কেনাকাটা সম্পূর্ণরূপে ই-জিপি সিস্টেমে সম্পন্ন করা এবং ১০ শতাংশের বিধান বাতিল করার বিষয়গুলো।

 


সভায় একাধিক অংশগ্রহণকারী দাবি করেছেন, একই কোম্পানি একাধিক কাজ করে গেলে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ও কার্যকর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অর্থের সর্বোত্তম মূল্য নিশ্চিত করা হবে।

 

এই পদক্ষেপগুলো সরকারের প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের আরও আধুনিকীকরণ এবং দুর্নীতি কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে।

সরকারি কেনাকাটায় ১০% মার্জিন বাতিলের সিদ্ধান্ত