ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:০৪:৫৮ পিএম

সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকের অনীহা, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা

১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০ এএম

সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকের অনীহা, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা

ছবি: সংগ্রহ

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর দেড় মাস পার হলেও এখনো একটি ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। কৃষকরা অভিযোগ করছেন, ধান শুকানোর ঝামেলা, ব্যাংকের জটিলতা এবং দালালের ঘুষ চাওয়ার কারণে তারা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন। অন্যদিকে, খোলাবাজারে সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্য পাওয়ায় কৃষকরা তাদের ধান বাজারেই বিক্রি করছেন।

 

সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় চালকল মালিকরাও গুদামে চাল দিতে আগ্রহী নন। এ বছর ধানের বেশি দাম এবং চাল উৎপাদনে উচ্চ খরচের কারণে মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে চুক্তির কারণে চাল দিচ্ছেন, তবে অধিকাংশই গুদামে চাল সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এতে করে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

 

চলতি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় ৫৬৪ মেট্রিক টন ধান এবং ১৩৭ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭৩ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যেই পূরণ হয়েছে। তবে সেদ্ধ চাল সংগ্রহের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ এবং ধান সংগ্রহ একেবারেই শুরু করা যায়নি।

 

কৃষকরা বলছেন, বাজারে ধানের মণ ১,৪৫০ থেকে ১,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য ১,৩২০ টাকা। ফলে লোকসান দিয়ে তারা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন। একই সঙ্গে ধান শুকানো এবং ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রক্রিয়াও তাদের জন্য বাড়তি ঝামেলা তৈরি করেছে।

 

চালকল মালিকদের বক্তব্য, ধানের বেশি দাম হওয়ায় চাল উৎপাদনে কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে ৫০ টাকার বেশি, কিন্তু সরকার চালের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৪৭ টাকা। এ অবস্থায় তারা গুদামে চাল দিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে চুক্তির শর্তে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে চাল সরবরাহ করছেন, কারণ চাল না দিলে কালো তালিকাভুক্ত হয়ে লাইসেন্স বাতিলের শঙ্কা রয়েছে।

 

হাকিমপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খালেদা বানু জানান, সরকারি মূল্যের তুলনায় বাজারের দাম বেশি হওয়ায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় থাকায় তিনি আশাবাদী যে, বাজারের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে ধান সংগ্রহ সম্ভব হবে। এদিকে চুক্তিবদ্ধ মিলাররা চাল সরবরাহ না করলে তাদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষকদের গুদামে ধান দিতে উদ্বুদ্ধ করা এবং চালকল মালিকদের জন্য সরকারি দামের পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অন্যথায় এ মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে পড়বে।

সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকের অনীহা, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা