ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:৫৪:৪৩ এএম

সরকারের বিদেশি ঋণের ৬৯% বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাপানের

৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:৩০ পিএম

সরকারের বিদেশি ঋণের ৬৯% বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাপানের

ছবি: সংগ্রহ

শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারত, চীন ও রাশিয়া। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাসিনার একতরফা ও রাতের ভোটসহ নানা অনিয়মে তারা প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নে সহায়তার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে দেশ তিনটি। এক্ষেত্রে শীর্ষ তিনটি স্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান।

 

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের ঋণ স্থিতির পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৮২২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপান সরকারের সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ৪৭ দশমিক ৬১৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মোট ঋণ স্থিতির ৬৯ শতাংশের বেশি এসেছে তিন সংস্থা ও দেশের। আর বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহীত ঋণের ২১ শতাংশ ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে এসেছে। তথ্যমতে, বৈদেশিক ঋণ স্থিতির ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত জুন পর্যন্ত এ সংস্থাটির ঋণ স্থিতির পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৬২৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এডিবির গত জুন পর্যন্ত ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৭৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপানের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৫১ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

 

শীর্ষ তিন উৎসের বেশিরভাগ ঋণই সহজ শর্তের। এর মধ্যে জাপান সরকার বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়। পরের অবস্থানে থাকা বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রায় সব ঋণই সহজ শর্তে। তবে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জাপান সুদের হার সামান্য বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণের সুদহারও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশকে কিছু কঠিন শর্তের ঋণপ্রস্তাব করেছে সংস্থাটি দুটি। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের সুদহার আরও কিছুটা বাড়বে বলেই প্রক্ষেপণ করেছে ইআরডি। চতুর্থ অবস্থানে থাকা রাশিয়ার গত জুন পর্যন্ত ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২৩ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের ঋণের ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এ ঋণ দিয়েছে দেশটি, যার সুদের হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। পরের অবস্থানে থাকা চীনের ঋণ স্থিতি গত জুন পর্যন্ত ছিল ৫ দশমিক ৮৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের আট দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ দুই দেশের ঋণের শর্ত কঠিন এবং সুদহার অনেক বেশি। কঠিন শর্তের এসব ঋণ পরিশোধ নিয়ে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে চীনের ঋণের শর্ত সহজ করার জন্য চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

 

এদিকে নতুন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বাংলাদেশকে ঋণ দেয়া বাড়াচ্ছে। গত জুন শেষে সংস্থাটির ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩২৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বিদেশি ঋণের তিন দশমিক ৩৮ শতাংশ। সপ্তম স্থানে থাকা ভারতের ঋণ স্থিতি ছিল গত জুন পর্যন্ত ১ দশমিক ৫৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ঋণের দুই দশমিক ২৫ শতাংশ। আর অষ্টম স্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ স্থিতি গত জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ০১৪ মিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ঋণের এক দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ তিন উৎসের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ সহজ শর্ত হলেও এআইআইবি ও ভারতের ঋণ তুলনামূলক কঠিন শর্তের। এসব ঋণ পরিশোধে সময় কম পাওয়া যায়।

 

ইআরডির তথ্যমতে, ১৯৭১-৭২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৩ বছরে বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশ ঋণ পেয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৭৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শীর্ষে থাকা বিশ্বব্যাংক গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশকে দিয়েছে ২৬ দশমিক ৭০৮ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এডিবি গত জুন পর্যন্ত সরকারকে ঋণ দিয়েছে ২৩ দশমিক ৪৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপান বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ১৭ দশমিক ২১৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পদ্মা সেতু নির্মাণে এদের ঋণ দেয়ার কথা ছিল। যদিও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সরে যায় এ তিন উন্নয়ন সহযোগীই। তবে এখনও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়মিত ঋণ দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপান।

 

ঋণ ছাড়ের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটি এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৮ দশমিক ৪২২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যা মোট ঋণের আট দশমিক ৭৮ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা রাশিয়া গত জুন পর্যন্ত ঋণ ছাড় করেছে ৮ দশমিক ১১০ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের ঋণের আট দশমিক ৪৬ শতাংশ। শীর্ষ পাঁচের পরের অবস্থানে থাকা দেশ ও সংস্থাগুলোর ঋণের পরিমাণ তুলনামূলক কম।

 

ঋণ দেয়ায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক (এআইআইবি) গত জুন পর্যন্ত ছাড় করেছে ২ দশমিক ৪০২ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ছাড়কৃত ঋণের দুই দশমিক ৫১ শতাংশ। ঋণ দেয়ায় সপ্তম স্থানে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত। গত জুন পর্যন্ত দেশটি ছাড় করেছে ১ দশমিক ৯৭৬ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ছাড়কৃত ঋণের দুই দশমিক ০৬ শতাংশ। আর অষ্টম স্থানে থাকা ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) গত জুন পর্যন্ত ছাড় করে ১ দশমিক ২৫৩ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ছাড়কৃত ঋণের এক দশমিক ৩১ শতাংশ।

 

তালিকায় নবম স্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণের পরিমাণ ১ দশমিক ২৩৬ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ঋণের এক দশমিক ২৯ শতাংশ। বাকি দেশগুলোর ঋণ এক বিলিয়ন ডলারের কম।

সরকারের বিদেশি ঋণের ৬৯% বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাপানের