ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১১:৪৩:০৯ এএম

সরকার ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে

১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৯ এএম

সরকার ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে

ছবি: সংগ্রহ

দেশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে খাদ্যপণ্যের দাম। অথচ সেভাবে বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য। চলমান পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় রাখতে খাদ্যপণ্য মজুদে জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার।

 

এর ধারাবাহিকতায় পাম-সয়াবিন তেল, মসুরের ডাল, জ্বালানি তেল, সার এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এসব পণ্য কেনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল, ১৯৬ কোটি টাকার পাম-সয়াবিন তেল, মসুরের ডাল ৯৫ কোটি, ৬৬১ কোটি টাকার সার এবং ৭০৮ কোটি টাকার এলএনজি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ২৩ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
সভা সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে ১১ হাজার ২৩৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) এবং ১০ হাজার ৭১০ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং দুবাইর ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড থেকে পরিশোধিত জ্বালানি এবং সৌদি আরবের সৌদি এরাবিয়ান অয়েল কোম্পানি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে।

 

সভা সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সৌদি আরবের সৌদি এরাবিয়ান অয়েল কোম্পানি থেকে ২০২৫ সালের জন্য ৭ লাখ টন এরাবিয়ান লাইট ক্রুড (এএলসি) গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মাধ্যমে এই জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৫ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

 

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আর এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে আন্তর্জাতিক কোটেশন (দরপত্র) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১০ হাজার ৭১০ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। সিঙ্গাপুরের ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং দুবাইর ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড থেকে এই পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে।

 

১৯৬ কোটি টাকার পাম-সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন : স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল এবং ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পাম অয়েল কিনতে ব্যয় হবে ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৪০ টাকা এবং প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম পড়বে ১৩০ টাকা। এ ছাড়া ৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দিয়ে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে এই সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল এবং নাবিল নবা ফুড লিমিটেড থেকে মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার পরিশোধিত লুজ সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে এই সয়াবিন তেল কেনা হবে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয়েছে ১৪০ টাকা। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

 

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আর এক প্রস্তাবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার লুজ পাম অয়েল কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। এই প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে এই পাম অয়েল কেনা হবে। প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম ধরা হয়েছে ১৩০ টাকা। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি টাকা। এই পাম অয়েলও টিসিবির জন্য কেনা হবে। এ ছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার আর একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ৯৫ টাকা ৯৭ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। রাজশাহীর নাবিল নবা ফুডস লিমিটেড থেকে এই মসুর ডাল কেনা হবে।

 

১ লাখ ৩০ হাজার টন সার কেনায় ব্যয় হবে ৬৬১ কোটি টাকা : সৌদি আরব, রাশিয়া ও মরক্কো থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার, ৩০ হাজার টন এমওপি সার, ৪০ হাজার টন ডিএপি সার এবং ৩০ হাজার টন টিএসপি সার রয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৬০ কোটি ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

 

জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি (সাবিক) থেকে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩৪২ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার।

 

এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তির আওতায় ৩০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন ‘প্রডিন্টরগ’ এর কাছ থেকে ১০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দিয়ে এই সার আমদানি করা হবে। প্রতি টন সারের দাম ধরা হয়েছে ২৮৯ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার।

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপসের কাছ থেকে এ সার কিনতে ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৫৮৪ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার।

 

এ ছাড়া মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তির আওতায় ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির আর একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপসের কাছ থেকে এ সার কিনতে ব্যয় হবে ১৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৪২৩ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।

 

৭০৮ কোটি টাকায় এক কার্গো এলএনজি কিনবে সরকার : এদিকে দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক কোটেশন বা দরপত্রের মাধ্যমে এক কার্গো তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৭০৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮০ টাকা।

 

সভা সূত্রে জানা গেছে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো (২০২৫ সালের ৪-৫ জানুয়ারি) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এই এলএনজি আমদানির প্রস্তাব নিয়ে আসে।

 

সূত্রটি জানিয়েছে, পেট্রোবাংলা থেকে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তিনটি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।

 

দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সিঙ্গাপুর এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫ দশমিক শূন্য ২ মার্কিন ডলার হিসাবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৭০৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮০ টাকা।

সরকার ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে