ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৪৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ
সর্বজনীন পেনশনে নতুন সুবিধা যোগ হলো
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৪৫ এএম
![সর্বজনীন পেনশনে নতুন সুবিধা যোগ হলো](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/26/20241026103836_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে কল্যাণমুখী উদ্যোগ ঘোষণা করে এই কর্মসূচিকে আরও জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গ্রাহক আকর্ষণে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক পেনশন সুবিধার বাইরে গ্র্যাচুইটি হিসেবে দেওয়া হবে এককালীন অর্থ। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
এই সুবিধার আওতায় অসুস্থ গ্রাহক চিকিৎসায় পাবেন আর্থিক সহায়তা। এ ছাড়া ঈদ ও পূজায় বোনাস এবং সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখের মতো অনুষ্ঠানে ভাতা দেওয়ার মতো পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে সরকারি চাকরিজীবীদের ন্যায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের গ্রাহকদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া চলতি মাসেই গ্রাহকদের হিসাবে ৮ শতাংশ হারে মুনাফা প্রদান করবে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে হিসাব নিকাশ শুরু হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সর্বজনীন পেনশন স্কিমটি চালু থাকবে কি না তা নিয়ে গ্রাহকদের মনে সংশয়-সন্দেহ তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন গ্রাহক নিবন্ধন এবং চাঁদা আদায়ের হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। অনেক নিবন্ধনকৃত গ্রাহক সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক গ্রাহক জমাকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পরামর্শ চান এবং একটি বৈঠকও করেন। কিন্তু ওই বৈঠকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে জোরালো কোনো মন্তব্য করেননি অর্থ উপদেষ্টা।
ওই সভায় পেনশন পরিচালান পর্ষদের চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম জনগণের জন্য একটি কল্যাণমুখী উদ্যোগ। সর্বজনীন পেনশন স্কিমসমূহ মানুষের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা এবং স্কিমসমূহে সকলের অংশগ্রহণে উদ্ধুদ্ধকরণের জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
জানা গেছে, গত সরকারের সময় সর্বজনীন পেনশন স্কিমটি অনেকটা তাড়াহুড়া করেই চালু করা হয়। এর ফলে বিদ্যমান পেনশন কর্মসূচিটি নিয়ে বেশকিছু বিতর্ক রয়েছে গ্রাহকদের। সেই সময় নির্বাচন সামনে রেখে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়েই সাবেক প্রধানমন্ত্রী কর্মসূচিটির উদ্বোধন করেন। ফলে এই কর্মসূচির লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে ওই সময়ও বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু সরকার দ্রুতই কর্মসূচিটি জনগণের সামনে নিয়ে আসেন। হিসেব করে দেখা গেছে, বর্তমান প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) করলে যে পরিমাণ মুনাফা পাওয়া যায় সেই তুলনায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম খুব বেশি আকর্ষণীয় নয়।
সরকারি চাকরিজীবীদের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদহার ১৩ শতাংশ এবং সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১১ শতাংশের বেশি হলেও সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সুদহার মাত্র ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে টাকা জমা দিয়েছেন, গত অর্থবছরের জন্য তাদের এ হারে সুদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, গ্র্যাচুইটি বাবদ পেনশনারদের কী পরিমাণ অর্থ এককালীন পরিশোধ করা হবে, সেক্ষেত্রে মাসিক পেনশনের পরিমাণ কতটা কমতে পারে, তা বিশ্লেষণের কাজ শুরু করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এটি হলে যারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হবেন, সবাই স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পাবেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় পেনশন বয়সে পৌঁছানো নাগরিকদের মাসিক পেনশন সুবিধার বাইরেও গ্র্যাচুইটি বাবদ এককালীন অর্থ পরিশোধ করা হয়। ভারতের আদলে বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হলেও বিগত সরকার গ্র্যাচুইটি সুবিধা বা মাসিক পেনশন সুবিধার বাইরে পেনশনারদের এককালীন অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করার ব্যবস্থা রাখেনি।
তিনি বলেন, এককালীন গ্র্যাচুইটি দেওয়ার বিধান যুক্ত হলে মাসিক পেনশনের পরিমাণ কমে যাবে। যেহেতু সর্বজনীন পেনশনারদের মূল বেতন বলে কিছু নেই, তাই এককালীন গ্র্যাচুইটি হিসেবে তাদের জমা দেওয়া চাঁদার একটি অংশ পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য দেশে কীভাবে গ্র্যাচুইটি পরিশোধ করা হচ্ছে, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থ উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে তা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ সম্মতি দিলে এককালীন গ্র্যাচুইটি পরিশোধের বিধান যুক্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট চারটি স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করে সরকার। সরকারের দিক থেকে বিষয়টি ফলাও করে প্রচারের চেষ্টা করা হলেও গত ১৪ মাসে মানুষকে তেমন আকৃষ্ট করতে পারেনি স্কিমগুলো। এখন পর্যন্ত সব স্কিমে নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। এর মধ্যে শুধু সমতা স্কিমে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। মূলত প্রবাসী ও বেসরকারি খাতে নিয়োজিতদের আকৃষ্ট করতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হলেও স্কিমগুলো তাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না।প্রবাসী ও বেসরকারি খাতে নিয়োজিতদের জন্য চালু করা তিনটি স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা মাত্র ৮৬ হাজার ৪৯৪ জন। এদের মধ্যে অনেকে দু-এক মাস কিস্তি পরিশোধ করার পর আর কিস্তি দিচ্ছেন না।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে গ্রাহকদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় ১৩১ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে ট্রেজারি বন্ডে। বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা হয়েছে, তা চলতি মাসেই পেনশন স্কিমের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে বণ্টন করা হবে। পেনশন বিধিমালা বলছে, সর্বজনীন পেনশন প্রথায় যার যত টাকা জমা, মেয়াদ শেষে তার তত বেশি পেনশন।
স্বল্প আয়ের মানুষদেরও বিমুখ করবে না এ উদ্যোগ। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমাবেন, তাদের জন্য শুরু থেকেই থাকবে সরকারের আরো ৫০০ টাকার ভর্তুকি। সবমিলিয়ে সবার জন্যই থাকছে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বাড়তি কয়েকগুণ মুনাফা। শুধু তাই নয়, পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত হিসেবে রাখার ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর। জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন আকর্ষণীয় করতে নানামুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জেলা ও বিভাগ ভিত্তিক পেনশন মেলা কর্মশালা ও রোড শো আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মিডিয়ায়ও এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
![সর্বজনীন পেনশনে নতুন সুবিধা যোগ হলো](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)