ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৪:৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
সহজ ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সেবা যুক্ত হওয়ায় এমএফএসে লেনদেন বেড়েছে ৩.৮৪ লাখ কোটি টাকা
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৪:৩ পিএম

ছবি: সংগ্রহ
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর (এমএফএস) লেনদেনে সহজলভ্যতা ও গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী নতুন নতুন সেবায় এই খাতের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৪ সালে এমএফএসের মাধ্যমে আগের বছরের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৩.৮৪ লাখ কোটি টাকা বা ২৮.৪২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১৭.৩৭ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৩.৫২ লাখ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এমএফএস অ্যাকাউন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩.৮৬ কোটি। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২২.০৪ কোটি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১ কোটি ৮২ লাখ অ্যকাউন্টধারী বেড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী নতুন নতুন সেবার বিস্তারে নতুন উদ্যেক্তা এজেন্ট থেকে শুরু করে গ্রাহক অ্যাকাউন্টের পরিমাণও ব্যাপক বাড়ছে।
কম সময়ের মধ্যে দ্রুত টাকার প্রয়োজন হয়, এমন স্বল্প-আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে এমএফএস জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশি। উদাহরণ হিসেবে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড সেল্সম্যান হিসেবে চাকরিরত জাকির হোসেনের কথা ধরা যাক। রাজধানীর কারওয়ানবাজার, পল্টন ও প্রেসক্লাব এলাকায় পণ্য ডেলিভারি দেন তিনি। প্রতি মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে অফিস থেকে বেতন পান। মাসের শুরুতে মেস ভাড়া কিংবা গ্রামে সংসারের খরচের টাকা না থাকলেই তিনি বিকাশ থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে ঋণ তুলে নেন। মোবাইল লেনদেনের সহজলভ্যতায় নিমেষেই কেটে যায় তার সংকট।
জাকির বলেন, 'আমি ছোট চাকরি করি। বেতন কম হওয়ায় মাসের শুরুতে প্রায়ই হাতে টাকা থাকে না। বিকাশের মাধ্যমে ঋণটির জন্য কোনো জামানত লাগছে না, ব্যাংকেও যেতে হচ্ছে না। এছাড়া যেকোনো সময়ে ফেরত দেয়ার সুযোগ রয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই টাকা তুলতে পারি। তাই আমি প্রায়ই এই সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন করি।'
সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি এমএফসের মাধ্যমে উদ্যোক্তা এজেন্টের সংখ্যাও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.২৮ লাখে। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ১৭.২৪ লাখ।
বিকাশ লিমিটেডের কর্পোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস-এর প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, 'শহর থেকে গ্রামে সর্বত্রই এমএফএস সার্ভিস দেশের মানুষের কাছে লেনদেনের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠছে। গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে আস্থা ও হ্যাবিট তৈরি হওয়ায় এই সার্ভিস দিনে দিনে বাড়ছে। এমএফএস এখন আর সেন্ড মানি ও ক্যাশ আউট সার্ভিসের মধ্যে নেই। গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী নতুন নতুন সেবা তৈরি হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন থেকে এমএফএসে লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে। এমএফএসে জুনে ১.২২ লাখ কোটি টাকা, আগস্টে ১.৩৭ লাখ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ১.৪৫ লাখ কোটি টাকা, অক্টোবরে ১.৫৪ লাখ কোটি টাকা, নভেম্বরে ১.৫৬ লাখ কোটি টাকা ও ডিসেম্বরে এযাবতকালে এক মাসে সর্বোচ্চ ১.৬৪ লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
শামসুদ্দিন হায়দার বলেন, 'বিকাশের মাধ্যমেই ৩৩ লাখ নতুন গ্রাহক এমএফএসে যুক্ত হয়েছে। তাদের অনেকে বিকাশে ছোট ছোট ডিপিএসের মাধ্যমে অর্থ জমা করছেন। এছাড়া বিকাশের মাধ্যমে গ্রাহকের কোনো ধরনের জামানত ছাড়া ঋণ দেওয়ার সুবিধা দেওয়ায় গ্রাহকের কাছে এই সেবাটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।'
'বিকাশের গ্রাহকরাই প্রতিদিন প্রায় ২-৩ কোটি লেনদেন করছেন। বিকাশের মাধ্যমেই তারা সব ধরনের পণ্য কেনা থেকে সরকারি চালান পর্যন্ত দিতে পারছেন,' বলেন তিনি।
দেশে এমএফএসের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট-এর মাধ্যমে। পরে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তীতে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবা এনেছে।
বর্তমানে তেরোটি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে। সেগুলো হলো: রকেট, বিকাশ, মাইক্যাশ, ইসলামী ব্যাংক এমক্যাশ, ট্রাস্ট আজিয়াটা পে (ট্যাপ), ফার্স্টক্যাশ, উপায়, ওকে ওয়ালেট, রূপালী ব্যাংক, টেলিক্যাশ, ইসলামিক ওয়ালেট, মেঘনা পে ও নগদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা নগদের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার বলেন, 'বর্তমানে প্রতিদিন এমএফএসের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। আমি মনে করি, আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রতিদিন ১০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে।'
'এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেনের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন এমএফএসের সঙ্গে অনেক ব্যাংক ও মার্চেন্ট যুক্ত হয়েছে। মুদি দোকান, মাছের দোকান ও ছোট ছোট ফুড সেলারদের এই সার্ভিসে পুরোপুরি আনতে পারলে লেনদেন আরও অনেক বাড়বে,' বলেন তিনি।
বদিউজ্জামান আরও বলেন, নগদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গত আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে নগদের লেনদেন ও গ্রাহকের পরিমাণ বাড়ছে।
'এমএফএসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ; কেনাকাটার বিল পরিশোধ; বেতন-ভাতা বিতরণ ও বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন গ্রাহক,' বলেন তিনি।
