ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:১৬:২৩ পিএম

সাবেক এমপিদের ৩১ গাড়ি নিলামের তোড়জোড়

১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:৩০ পিএম

সাবেক এমপিদের ৩১ গাড়ি নিলামের তোড়জোড়

ছবি: সংগ্রহ

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অবশেষে নিলামে উঠছে সাবেক এমপিদের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি গাড়িগুলো নিলামে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। গাড়িগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের অন্তত চার মাস পর। বিভিন্ন জটিলতায় নির্ধারিত ৪৫ দিন পর গাড়িগুলো নিলামে তোলা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কাস্টমসের তালিকাভুক্ত নিলাম ব্যবসায়ীরা জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় নিলামে বিলাসবহুল গাড়িগুলো কেনা সম্ভব নয়। ৮১০ থেকে ৮২৬ শতাংশ শুল্ক যোগ করলে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ১১-১২ কোটি টাকা। বড় অঙ্কের দাম এড়াতে তারা তৃতীয় নিলামে অংশ নিয়ে গাড়ি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নিলামে তোলার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, গাড়িগুলোর নিলাম আয়োজন আগেই সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময় পর সাবেক সংসদ সদস্যদের ঠিকানায় নোটিসও পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো ধরনের সাড়া না পাওয়ায় গাড়িগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে। মোট ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কোনো সাবেক এমপি নোটিস পাওয়ার পর সাড়া দিলেও তাকে পুরো শুল্ক হার পরিশোধ করেই গাড়ি নিতে হতো। এসব গাড়ি ছাড়ে তারা কখনো শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন না।

কাস্টমস সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে দ্বাদশ সংসদের এমপিদের নামে অর্ধশতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করা হয়। সরকার পতনের আগ মুহূর্তে মাত্র কয়েকজন গাড়িগুলো ছাড় করতে পেরেছিলেন। বেশিরভাগ এমপি গাড়ি ছাড় করতে না পারায় আটকে যায় চট্টগ্রাম ও খুলনার মোংলা বন্দরে। কাস্টমসের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, আমদানির পর ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় না হলে নোটিস পাঠানো হয় আমদানিকারকের কাছে। ৪৫ দিন পার হলেই ছাড় না করা গাড়িগুলো তোলা হয় নিলামে। নিয়ম অনুযায়ী গাড়িগুলোর ইনভেন্ট্রি (বন্দর ইয়ার্ডে সরেজমিন গিয়ে তথ্যাদি সংগ্রহ) করা হয়। এরপর গাড়িগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করা হয় নিলামে তোলার জন্য। অর্ধশতাধিক গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হলেও ইনভেন্ট্রি করা হয়েছে ৩১টি গাড়ির। তাই এসব গাড়ি নিলামে তোলার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের আগে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনেছিলেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, নেত্রকোনার সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য এসএকে একরামুজ্জামান, ফয়জুর রহমান, সিরাজগঞ্জের চয়ন ইসলাম, জান্নাত আরা হেনরি, নাটোরের আবুল কালাম, সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বগুড়ার মজিবুর রহমান মঞ্জু, রেজাউল করিম তানসেন, টাঙ্গাইলের অনুপম শাহজাহান জয়, হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সুনামগঞ্জের রণজিৎ সরকার, ড. সাদিক, গাইবান্ধার আবুল কালাম আজাদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যশোরের নওয়াব আলী জোয়ার্দার, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহিদি, লক্ষ্মীপুরের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও দিনাজপুরের মুহাম্মদ জাকারিয়া। গত আগস্টেই এসব সাবেক সংসদ সদস্যের নামে ছাড় করার সময় বেঁধে দিয়ে নোটিস পাঠানোর উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কিন্তু আগস্টে নোটিস পাঠানো যায়নি। গত বছরের শেষ দিকে সব সাবেক এমপির নামে নোটিস পাঠানো হয় নিজেদের ঠিকানায়। কিন্তু এমপিরা পলাতক থাকায় কারও পক্ষ থেকে চিঠির কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত নিলামে বিক্রি করার উদ্যোগ নেয় কাস্টমস।

কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির পর নির্ধারিত সময়ে ছাড় করা না হলে নিলামে তোলার তোড়জোড় চলে। কিন্তু তার আগেই আদালতে রিট মামলা করে খালাস আটকে দেন আমদানিকারকরা। এভাবে বারবার নিলামে অংশ নেওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত নিলাম ব্যবসায়ীরা কিনতে পারত না। তবে এবার সাবেক এমপিদের নামে আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়িগুলো রিট মামলা করে আটকানোর সুযোগ তেমন নেই। কারণ অধিকাংশ সাবেক এমপি লাপাত্তা। অনেকে কারাগারে। তাই শুল্কমুক্ত সুবিধার বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিলামে তোলার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নেই।

তৃতীয় নিলামে কিনতে চান নিলাম ব্যবসায়ীরা : সাবেক এমপিদের নামে আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়ি স্বাভাবিক নিয়মে আমদানি করতে হলে ৮১০ থেকে ৮২৬ ভাগ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। বর্তমানে শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়িগুলো সাবেক এমপিরা ছাড় করতে পারলে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়ত দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। কিন্তু নিলামে তোলা হলে পুরো শুল্কহার হিসাব করে দাম নির্ধারণ করা হবে। এতে প্রতিটি গাড়ির গড় হিসাব করলে দাম পড়বে ১১ থেকে ১২ কোটি টাকা। প্রথম নিলামে ৩১টি গাড়ির প্রতিটির জন্য কাস্টমস দাম নির্ধারণ করবে ১১-১২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় নিলামে কিছুটা দাম কমালেও প্রায় একই থাকবে। তৃতীয় নিলামে ক্রেতা না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে একেবারেই দাম কমিয়ে দেবে। তখন গাড়ির জন্য নিলাম ব্যবসায়ীরা অংশ নেবেন এবং প্রত্যাশিত কম দামে কিনতে পারবেন বলে মনে করছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় নিলামে ৮২৬ ভাগ শুল্ক হার যোগ করে গাড়ির দাম নির্ধারণ করা হবে। ওই নিলামে ১১-১২ কোটি টাকা দিয়ে সাবেক এমপিদের গাড়ি কেনা সম্ভব নয়। আমরা তৃতীয় নিলামের জন্য অপেক্ষায় থাকব। তৃতীয় নিলামে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দাম একেবারেই কমিয়ে দিতে পারে। তখন আমরা নিলামে অংশ নিয়ে সাবেক এমপিদের গাড়িগুলো কিনতে পারব বলে মনে করছি।

সাবেক এমপিদের ৩১ গাড়ি নিলামের তোড়জোড়