ঢাকা শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ - ৭:৩০:৫২ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৭ এএম

অনলাইন সংস্করণ

সিন্ডিকেটে জীবন কাত

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৭ এএম

সিন্ডিকেটে জীবন কাত

ছবি: সংগ্রহ

গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে তেল নিয়ে তেলেসমাতি। সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে আলু-পেঁয়াজও। বাজারে এই আছে এই নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তেল, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত দামে বাজারে মিলছে না। বরং এসব পণ্য সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এই বুঝি সংকট তৈরি হলো। অথবা কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়বে এমনটাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।

 

এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর ও ব্যবসায়ীদের চোর-পুলিশ খেলায় চিড়েচ্যাপ্টা জনগণ। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দাম এবং বোতলজাত তেলের সরবরাহ সংকট নিয়ে দোষারোপের তীর ছুড়ছেন একে অন্যের দিকে। বিক্রেতারা বলছেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে তেলের অর্ডার দেওয়া হলেও তারা সময়মতো তেল পাচ্ছে না। জানা গেছে, ভোক্তা পর্যায়ে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খাদ্য আমদানিতে জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার। একই সঙ্গে এসব পণ্য আমদানিতেও শুল্ক কর কমিয়েছে সরকার। তবুও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ভোজ্য তেলসহ আলু-পেঁয়াজ।

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সয়াবিন ও পাম অয়েল বিক্রয়ের ওপর স্থানীয় পর্যায়ে প্রদেয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে প্রদেয় মূসক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ছাড়া আর কোনো শুল্ককর অবশিষ্ট নেই।

 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা লিটার। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি লিটারে দাম পড়ছে ১৭০ টাকা। যদিও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি বোতলজাত তেলের সরবরাহ। পাম অয়েলও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। নতুন আলু কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পুরোনো আলু ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকা। আমদানিকৃত পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

 

এ দিকে গত ৩০ দিনে ঢাকা মহানগরীতে খুচরা বাজার দরের তালিকা প্রকাশ করেছে ট্রেডিং করপোরেশ অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বলছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পরিশোধিত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৩ থেকে ১৬৫ টাকা। পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৫৬ থেকে ১৫৭ টাকা। আলু রকমভেদে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে টাকা এবং পেঁয়াজ ৫০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত।

 

রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার সবজি বিক্রেতা ইফাদ সময়ের আলোকে বলেন, শুধু আলু-পেঁয়াজ-তেল নয়, সবকিছুই বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। বছরজুড়ে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়তি থাকেই। আর সেটি নিয়ে শুরু হয় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। দাম বাড়ার খবর শুনলেই শুরু সংকট আর সরবরাহ কমে যাওয়ার খেলা। জানি না এসব চক্রের হাত থেকে কবে রেহাই পাব?

 

আরেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম যে হারে বাড়ছে, সে হারে তো আমাদের বেতন বাড়ে না। বছর ধরে একই বেতনে কাজ করে যাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বছরে কয়েক দফা বাড়ছে তা বাজারে এলেই টের পাওয়া যায়। আসলে এসব দেখার কেউ নেই। ভোক্তা অধিদফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই ক্রেতা।

 

আলুর দাম নিয়ে আক্তার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, গত বছর এ সময়ে তুলনামূলক কম দামেই আলু কিনেছি। কিন্তু এ সময় এসে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে আলুর দাম অনেক বেশি।

 

সূত্র জানায়, ভারত থেকে আলু আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে ২১ থেকে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ এবং লাভসহ এই আলু ২৫ থেকে ২৮ টাকা বিক্রির কথা। আর পাইকারি হয়ে খুচরা পর্যায়ে একই আলু ভোক্তা পর্যায়ে ৩০-৩৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু সেই আলু ক্রেতা ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনছেন। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আমদানিকারক ও আড়তদার সিন্ডিকেট।

 

রাজধানীর মিরপুর-১৩ এলাকার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে সময়ের আলোকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো নিয়ে আমরাও বিরক্ত। আমাদেরও তো পণ্য কিনতে হচ্ছে বাড়তি দাম দিয়েই। তাও আবার সময়মতো পাচ্ছি না। ১৫ দিন আগে তেলের অর্ডার দেওয়া হলেও কোম্পানির লোকেরা এলাকার দিকে আসছেই না।

 

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে তেল বিক্রি হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু দাম নির্ধারণ করলেই হবে না, বাজারে ঠিকমতো সরবরাহ থাকতে হবে।

 

রাজধানীর আরেক আলু ব্যবসায়ী বলেন, এ বছর প্রবল বন্যায় আলু ও পেঁয়াজের বীজে সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে বাজারেও সংকট। তবে এখন উৎপাদন বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে দাম কমতে শুরু করেছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ১ কোটি ১৬ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে। মোট ১ কোটি ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন উৎপাদনের সিংহভাগই উচ্চফলনশীল জাতের, যার পরিমাণ ১ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টন। আর স্থানীয় জাতের আলু উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৭ হাজার টন।

 

এদিকে বাজারে মজুদ সিন্ডিকেটকে বড় শক্তিশালী হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কি অনেক বেশি শক্তিশালী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সিন্ডিকেট না বলে বলুন ব্যবসায়ী যারা আছে তারা খুব শক্তিশালী। ব্যবসায়ীদের মধ্যে খুব বড় ব্যবসায়ী, মাঝারি, আমদানিকারক, সরবরাহকারী, এজেন্ট আছে, এটি একটি কমপ্লেক্স। যেটি ভাঙা সহজ না।

 

অন্যদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান সময়ের আলোকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছি। প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করছি। তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের আগে থেকেই ব্যবসায়ী চক্ররা নষ্টের সংস্কৃতি চালিয়ে আসছে। কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ব্যবসায় নষ্টের এই সংস্কৃতি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিন্ডিকেটে জীবন কাত