ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৫৩:০৭ পিএম

সৌদি-ইরান বৈরিতা শেষ হচ্ছে!

১৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:০ পিএম

সৌদি-ইরান বৈরিতা শেষ হচ্ছে!

ছবি: সংগ্রহ

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বহু দশক ধরে বৈরিতা বিদ্যমান। মূলত ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর শুরু হয় এই বৈরিতা। এই সম্পর্কের মূল কারণ ছিল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতবিরোধ। ইরান শিয়া ইসলামকে কেন্দ্র করে সামাজিক বিপ্লবের একটি ধারণা গ্রহণ করেছিল এবং নিজেকে শিয়া মুসলিমদের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে গেছে। অন্যদিকে সৌদি আরব সুন্নি ইসলামের নেতৃত্ব দাবি করে এবং মক্কা ও মদিনার মতো ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর মোড়ল বনে যায়।

 

তবে, গত কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের গতি পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরান ক‚টনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সম্পর্কের পুনঃস্থাপনে একাধিক কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে।

 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সেবাস্টিয়ান সোনসের মতে, ২০১৯ সালে সৌদি তেলের স্থাপনায় ইরানের হামলার পর সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে যে তারা এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারবে না। এ কারণে প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে বৈরিতা সমাধান করার কথা ভাবে রিয়াদ। কারণ সৌদি আরবের অর্থনীতি অনেকাংশে তেলের উপর নির্ভরশীল এবং এর স্থিতিশীলতা প্রভাবিত হয় আঞ্চলিক শান্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর।

 

এছাড়া, সৌদি আরব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি মিলিশিয়াদের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চায়। যদিও হামিদরেজা আজিজির মতো বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ইরান পুরোপুরি হুতি মিলিশিয়াদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম নয়। তবে তাদের সম্পর্ক ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

 

ইরানের জন্যও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরের পর বছর ধরে ইরানের ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলে আসছে। ইরান সরকার অর্থনৈতিক সমস্যা এবং দেশীয় অস্থিরতা মোকাবিলায় ক‚টনৈতিকভাবে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞ আজিজির মতে, ইরান পশ্চিমাদের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলেও, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন তার জন্য একটি লাভজনক কৌশল হতে পারে।

 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ। সৌদি আরব এবং ইসরাইল একটি যৌথ ইরানবিরোধী জোট তৈরি করতে পারে এমন উদ্বেগ ইরানের ছিলই। তবে সৌদি আরব এখন ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে দ্বিরাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই আশঙ্কা কমিয়ে দিয়েছে। সৌদি আরবের ক‚টনৈতিক লক্ষ্য এখন আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করা।

 

বিশেষজ্ঞ সোনসের মতে, সৌদি আরব এখন এক ধরনের কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করছে, যা তাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে সাহায্য করতে পারে। সৌদি আরব ইরান এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চায়, যা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করতে পারে। তাই দুই বৈরি প্রতিবেশির এই সমঝোতা একদিকে যেমন সৌদি আরব ও ইরান, তেমনি পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

সৌদি-ইরান বৈরিতা শেষ হচ্ছে!