ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:৫১:২৮ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৫৫ এএম

অনলাইন সংস্করণ

স্বর্ণ পাচার ঠেকাতে ‘ব্যাগেজ রুলস করছে এনবিআর

৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৫৫ এএম

স্বর্ণ পাচার ঠেকাতে ‘ব্যাগেজ রুলস করছে এনবিআর

ছবি: সংগ্রহ

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ দিতে বাংলাদেশে চালু থাকা ব্যাগেজ রুলস দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু যাত্রীর হাতে অপব্যবহৃত হচ্ছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যানুসারে, এই নিয়মের আওতায় বৈধ ট্যাক্স পরিশোধ করে আনা স্বর্ণ পরে একটি শক্তিশালী চোরাচালান চক্রের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। বিষয়টি মোকাবিলায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যাগেজ রুলসে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

 

ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল-আমিন এমন তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমান ব্যাগেজ রুলসে একজন ব্যক্তি একটি করে স্বর্ণের বার আনার বিধান রয়েছে। একজন যাত্রী ১১৬/১১৭ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের বার আনতে পারেন, যার জন্য ৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়।

 

তবে, বছরে কতবার এই নিয়ম ব্যবহার করে স্বর্ণ আনা যাবে, তা উল্লেখ না থাকায় এক শ্রেণির যাত্রী নিয়মিতভাবে এই সুযোগের অপব্যবহার করছেন। এই যাত্রীদের একটি অংশ প্রবাসী হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা চক্রের ভাড়াটে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তাদের আনা স্বর্ণ পরবর্তীতে মহাজনদের কাছে পৌঁছে যায় এবং প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়ে যায়।



প্রতিবছর ৪,০০০ কেজি বা তার বেশি স্বর্ণ দেশে আসছে, যার একটি বিশাল অংশ পরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
চক্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা মহাজনরা প্রবাসীদের দিয়ে স্বর্ণ আনানোর পর তা নানা কৌশলে বিদেশে পাচার করে।


শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই চক্রের মূল কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বছরে একজন যাত্রী কতবার স্বর্ণ আনতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে একটি নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে।


প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ তিনবার স্বর্ণ আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে যাত্রীকে আটক করা হবে এবং তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।


কাস্টমসের জন্য একটি অটোমেটেড সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে, যেখানে যাত্রীদের আনা স্বর্ণের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। কাস্টমসের কার্যক্রমকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


মালিকবিহীন স্বর্ণ উদ্ধারে বিমান সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগের জোরদার পদক্ষেপ শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ মহাজনদের চিহ্নিত করতে অভিযান জোরদার করেছে।


এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজে পাওয়া মালিকবিহীন স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বলেছেন, নতুন ব্যাগেজ রুলস কার্যকর হলে । স্বর্ণ চোরাচালানের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং জাতীয় রাজস্বও সুরক্ষিত থাকবে। চোরাচালানের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে।   

 

গত ৫ বছরে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় দেশে প্রায় ২০ হাজার কেজি স্বর্ণ এসেছে। এর একটি বড় অংশ পাচারের মাধ্যমে দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে। 

 

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা অত্যান্ত যুগোপোযুগী। এতে করে দেশে স্বর্ণের চোরাচালান অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে। গত কয়েক বছরে দেশে যে পরিমাণ স্বর্ণ এসেছে, তার বিশাল অংশই দেশের বাইরে চলে গেছে বলে আমরা মনে করি। এই রুলসের ফলে দেশে অবাধ স্বর্ণ আসা বন্ধ হয়ে যাবে।

 

কাস্টমস সূত্র জানায়, ব্যাগেজ রুলস ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৪ হাজার কেজির ওপরে দেশে স্বর্ণ আসে। সেই হিসাবে গত ৫ বছরে ২০ হাজার কেজির ওপরে দেশে স্বর্ণ এসেছে।

 

নতুন নিয়ম এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই অপব্যবহার রোধ করা গেলে দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। তবে এই উদ্যোগের সাফল্যের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ এবং চোরাচালান চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান চালানো অত্যন্ত জরুরি।

স্বর্ণ পাচার ঠেকাতে ‘ব্যাগেজ রুলস করছে এনবিআর