ঢাকা শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ - ১০:২৭:০৮ পিএম

হজের খরচ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে

১৪ মে, ২০২৪ | ৯:২৮ এএম

হজের খরচ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে

হজ প্যাকেজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছরের মতো এবারও হজযাত্রীর নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এ কারণে ৪৪ হাজার ২৩২টি কোটা খালি রেখে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে হজের জন্য সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হয় বাংলাদেশিদের।

 

এবার বেসরকারিভাবে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। কুরবানিসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এটা দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকায়। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে রাজ্য ভেদে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার রুপি খরচ হয়। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের চলতি বছর হজে যেতে খরচ হচ্ছে জনপ্রতি ৩ লাখ ৬০ হাজার রুপি।

 

বাংলাদেশে এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর নতুন করে চালু করা বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এছাড়া বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হবে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা কম। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। এর সঙ্গে কুরবানির খরচসহ আরও কিছু খরচ যুক্ত হবে।

 

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর নেতারা জানান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ হজযাত্রীদের জন্য ভর্তুকি দেয়। এ কারণে সেসব দেশের হজের খরচ তুলনামূলক বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। ভারতও হজযাত্রীদের জন্য ভর্তুকি দিত। তবে ২০১৮ সালে ভারতীয় হজযাত্রীদের জন্য দেওয়া ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নেয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরেও একজন ভারতীয় নাগরিক একজন বাংলাদেশি নাগরিকের তুলনায় অনেক কম খরচে হজ সম্পন্ন করতে পারেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চাইলে হজযাত্রীদের টিকিটের ওপর ভর্তুকি দিতে পারতো। তাহলে খরচ কিছুটা হলেও কমতো। হজ এজেন্সি মালিকরা বলেন, হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য হাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় আবেদন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।


তবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষিত হজ প্যাকেজ অনুযায়ী এবার বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা যা বিগত হজের সময় ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা যা বিগত হজের সময় ছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা। হজের সময় পাঁচ দিন ধরে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় হজযাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে তাঁবুর ব্যবস্থা করা, তাঁবুতে ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ, কম্বল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ ইত্যাদি।

 

এবার এই মোয়াল্লেম সেবা কমে হয়েছে ৬২ হাজার ২৭১ টাকা যা বিগত হজের সময়ে ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা। তবে এবার জেদ্দা, মক্কা, মদিনা-মুজদালিফা, আল-মাশায়েরের পরিবহন ব্যয় ১৯ হাজার ৩৩৩ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৪ টাকা। আর জমজম পানির দাম ৪২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৪৬ টাকা। ফলে এবার হজের খরচ গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমলেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক হজ এজেন্সি মালিক।

 

হজে যেতে ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দাদের খরচ হয় প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে। আর মালয়েশিয়া থেকে হজে যেতে খরচের পরিমাণ ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকার মধ্যে। মালয়েশিয়ার সরকার প্রতি বছর হজের জন্য ভর্তুকি দেয়। এছাড়া পাকিস্তান থেকে যারা হজ করতে যান তাদের খরচ হয় বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৩ লাখ থেকে সোয়া ৪ লাখ টাকা।

 

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজ প্যাকেজের মূল্য অস্বাভাবিক হওয়ায় গত বছরের মতো এবারও হজযাত্রী কম। যারা হজে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, তাদের অনেকেই ওমরার দিকে ঝুঁকছেন। ওমরায় সব মিলিয়ে খরচ পড়ে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু হজের ক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি। তিনি বলেন, বিমানের টিকিটের মূল্য কমানো হলে হজের খরচ কমানো সম্ভব। হাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি সরকারকে বারবার জানানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

 

ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানান, সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সৌদি আরব পর্বে সব খাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ কর অন্তর্ভুক্ত করা ও বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় হজের খরচ বেড়েছে।

 

তবে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির পরও গত বছরের তুলনায় এ বছর সাধারণ হজ প্যাকেজের খরচ কমানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ধর্মমন্ত্রী বলেন, সরকার হজযাত্রীদের সর্বোত্তম সেবা দিতে বদ্ধপরিকর।

হজের খরচ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে