ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ৬:৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
১৩৬ কোটি টাকার সেতুর কাজ হলো অর্ধেক
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ৬:৭ এএম
![১৩৬ কোটি টাকার সেতুর কাজ হলো অর্ধেক](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/17/20241017163041_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের ওপর সোনাহাট স্থলবন্দরগামী সড়ক সেতুর নির্মাণকাজের সময়সীমা চার দফা বাড়িয়েও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সময় ও প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও ছয় বছরে ১৩৬ কোটি টাকার সেতুর নির্মাণকাজ হয়েছে মাত্র অর্ধেক।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বলছে, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, নকশা পরিবর্তন ও করোনাকালীন স্থবিরতাসহ ঠিকাদারের কাজে ধীরগতির কারণে সেতু নির্মাণ শেষ করতে চারবার সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ছয় কোটি টাকার বেশি। গত ছয় বছরে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। বাকি কাজ শেষ করে আগামী ২০২৬ সাল নাগাদ সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট, বলদিয়া, চর ভূরুঙ্গামারী, আন্ধারীঝাড় ও তিলাই, নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস এবং নারায়ণপুর ইউনিয়নের সঙ্গে জেলা শহরসহ দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ রক্ষার জন্য দুধকুমার নদের ওপর নির্মিত সোনাহাট বেইলি সেতুটি একমাত্র পথ। ১৮৭৯ সালে তৎকালীন নর্দার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে বেঙ্গল ও আসামের সঙ্গে যোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাইকেরছড়া ইউনিয়নে দুধকুমার নদের ওপর সোনাহাট রেলসেতু নামে একটি সেতু নির্মাণ করে। ব্রিটিশ শাসনামল শেষে ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির পর সেতুটি অকেজো হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনী যাতে নদী পার হতে না পারে, সেজন্য সেতুর দুটি স্লিপার ভারতীয় সেনারা ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়।
এরপর স্টিলের স্লিপার দিয়ে মেরামত করে বেইলি সেতু হিসেবে চালু করা হয়। বর্তমানে সেটি দিয়ে রেলপথ চালু না থাকলেও সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পণ্যবাহী যানসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে। লাখো মানুষ ও বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছে তাই সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শতবর্ষ পুরোনো সেতুটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যানবাহন উঠলেই সেতুটির অবকাঠামো কাঁপতে থাকে।
স্থলবন্দর ও দুধকুমার পূর্বপাড়ের মানুষের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে বেইলি সেতুর কিছুটা ভাটিতে দুধকুমার নদের ওপর ৬৪৫ দশমিক শূন্য ১৫ মিটার দীর্ঘ নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে সওজ। এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড যৌথভাবে নির্মাণকাজ করছে। ১৩৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার চুক্তিতে শুরু হওয়া সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে ছয় বছরে তা শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় পুরোনো ও জরাজীর্ণ বেইলি সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ঝুঁকি এড়াতে সেতুর ওপর একসঙ্গে উভমুখী যান চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। একমুখী ও ধীরগতির যাতায়াতের কারণে প্রতিদিন বিড়ম্বনায় পড়ছেন মানুষ ও পরিবহনশ্রমিকরা।
দুধকুমারের পূর্বাপাড়ের বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, ‘ভূরুঙ্গামারী কিংবা জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র পথ এই নড়বড়ে সেতু। সেতুতে উঠলেই কাঁপতে থাকে। একমুখে গাড়ি দাঁড় করায় আরেক দিকের গাড়ি পার করতে হয়। কারও জরুরি কাজ থাকলেও কিছু করার থাকে না। এই ভোগান্তির শেষ কবে হবে জানা নাই। প্রতি বছর শুনি নতুন সেতু চালু হবে। কিন্তু হয় না। কী কাজ হয়, আমরা বুঝি না।’
সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে নিয়মিত মালামাল পরিবহন করেন ট্রাকচালক মানিক ও নুর ইসলাম। ভোগান্তির কথা জানিয়ে তারা বলেছেন, এমনে চলে না। দ্যাশের কোনও জায়গায় এমন সেতু নাই। গাড়ি ঠিকমতো লোড করে সেতু পার হওয়া যায় না। একবার একদিকে আরেকবার আরেকদিকে কাত হয় গাড়ি। জানমালের ঝুঁকি নিয়া চলতে হয়। ওই সেতু (নতুন) চালু হইলে সবার জন্য ভালো হইবো।
সওজের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরাতন সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুনটির কাজ বিলম্ব হলেও বর্তমানে কাজের গতি ভালো। পাইলিং শেষ করে কিছু গার্ডার নির্মাণ শেষ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।’
![১৩৬ কোটি টাকার সেতুর কাজ হলো অর্ধেক](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)