ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৩১:২৭ পিএম

২০৩০ সাল পর্যন্ত চলতে পারে বিবিয়ানার গ্যাস

২৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৩০ পিএম

২০৩০ সাল পর্যন্ত চলতে পারে বিবিয়ানার গ্যাস

ছবি: সংগ্রহ

দেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাস ফিল্ডগুলোর মধ্যে গ্যাসের সর্বোচ্চ পরিমাণে প্রমাণিত মজুদ মিলেছে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে। জাতীয় গ্রিডে মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশই আসছে বিবিয়ানা থেকে। এখন পর্যন্ত গ্যাস ক্ষেত্রটিতে গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ মিলেছে ৭ হাজার ৮৪ বিলিয়ন ঘনফুটের (বিসিএফ) মতো। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ বিসিএফ। সে অনুযায়ী গ্যাস ক্ষেত্রটিতে গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট আছে প্রায় ১ হাজার ২৫০ বিসিএফ।


পেট্রোবাংলার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গত সপ্তাহে। সেখানে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে উত্তোলনযোগ্য (থ্রি-পি) গ্যাসের মজুদ রয়েছে ৭ হাজার ৮৪ বিসিএফ বা ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ৫ হাজার ৬২২ বিসিএফ।


পরের ১১ মাসে অর্থাৎ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে উত্তোলন হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৪ মিলিয়ন ঘনমিটার বা প্রায় ১৬৬ বিসিএফ (প্রতি মিলিয়ন ঘনমিটার = দশমিক শূন্য ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি)। এ অনুযায়ী বিবিয়ানা থেকে প্রতি মাসে গড়ে গ্যাস উত্তোলন হয় ১৫ বিসিএফের কিছু বেশি। প্রতি অর্থবছরে গড়ে এখান থেকে গ্যাস তোলা হয় গড়ে ১৮১ বিসিএফ। সেক্ষেত্রে চলতি অক্টোবর পর্যন্ত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে আরো অন্তত ৬০ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের হিসাব বিবেচনায় বিবিয়ানায় প্রায় ১ হাজার ২৫০ বিসিএফের বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে।

 

জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড। দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প, বাণিজ্যিক, সারে গ্যাসের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ হচ্ছে সেখান থেকে। মজুদসংক্রান্ত পেট্রোবাংলার আগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিবিয়ানার গ্যাস এতদিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। যদিও বিদেশী কোম্পানির হাতে থাকা গ্যাসক্ষেত্রটি থেকেই সরবরাহ আসছে সর্বোচ্চ পরিমাণে। তবে মজুদসংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশিত গ্যাস ক্ষেত্রটিতে উত্তোলনযোগ্য মজুদের তথ্য অনুযায়ী, বিবিয়ানা থেকে অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত সরবরাহ অব্যাহত রাখা যাবে।

 

পেট্রোবাংলার হিসাব বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি বছর বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে কম-বেশি ১৮০ বিসিএফের মতো গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। উৎপাদন না কমলে বা একই হারে গ্যাস উত্তোলন করা হলে আরো অন্তত প্রায় সাত বছর সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। আর উত্তোলন ও মজুদ ব্যবস্থাপনার জন্য বিবিয়ানাসহ বাংলাদেশে নিজেদের গ্যাস ক্ষেত্রগুলোয় সর্বাধুনিক ও বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে শেভরনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

 

তবে ব্যবসায়িক নীতির কথা উল্লেখ করে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মজুদ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি শেভরন।

 

দেশে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র সরবরাহ করছে ৯৭৪ থেকে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। গতকালও জাতীয় গ্রিডে বিবিয়ানার সরবরাহ ছিল ৯৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রায় ৩৪ শতাংশ।

 

বিবিয়ানায় গ্যাসফিল্ডের মজুদ ও উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘গ্যাস ব্যবহার করতে থাকলে মজুদ কমবেই। বিবিয়ানায় কমলে যে ঘাটতি তৈরি হবে, তা মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে ৫০টি কূপ খনন করা হচ্ছে, ১০০টি কূপের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সমুদ্রে ও স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেয়া হয়েছে।’

 

আগামীতে বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলন পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে শেভরন বাংলাদেশের কমিউনিকেশন ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শেভরন বাংলাদেশে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করার জন্য পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগও অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক গ্যাসের বিদ্যমান চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে করে যাবে তারা।’

২০৩০ সাল পর্যন্ত চলতে পারে বিবিয়ানার গ্যাস