ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৪ জুলাই, ২০২৪ | ৪:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
৪০০ বছর আগে মুঘলদের তৈরি যে নিয়ম আজ থেকে বদলে যাচ্ছে
৪ জুলাই, ২০২৪ | ৪:৩৫ পিএম
![৪০০ বছর আগে মুঘলদের তৈরি যে নিয়ম আজ থেকে বদলে যাচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/07/04/20240704163451_original_webp.webp)
বাংলা সাল অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ৪৪০ বছরের পুরোনো মুঘল প্রথা দেশ থেকে বাতিল করা হয়েছে। চলতি মাস থেকে অর্থবছরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কর আদায়ের প্রথা কার্যকর করা হয়েছে।
এতদিন ভূমি কর আদায় করা হতো পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত। এই রীতি চালু হয়েছিল প্রায় ৪৪০ বছর আগে। তবে এখন থেকে সেটা খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে আদায় করা হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কৃষি ফসল ওঠার উপর নির্ভর করে মুঘল আমলে খাজনা আদায় করা হতো। সেই কৃষির ফলনের ঋতু পরিবর্তন হয়েছে।
মুঘল আমলে যেভাবে ভূমির খাজনা আদায় প্রবর্তন হয়
যুগের পর যুগ ধরে বাংলার গ্রামীণ সমাজ ও কৃষিখাতে নানা উপলক্ষে বাংলা সন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে দেখা যায়, মুঘল আমলে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত ছিল কৃষি। তখন ফসল থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সব কাজেই বাংলা সন ব্যবহার করা হতো।
মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারের ঐতিহাসিক আবুল ফজল তার শাসনকালের ইতিহাস নিয়ে তিন খণ্ডে লিখেছেন ‘আকবর-নামা’। এর তৃতীয় খণ্ড ‘আইন ই আকবরী’।
এতে সম্রাট আকবরের সরকার ব্যবস্থা, বহুবিধ প্রশাসনিক বিভাগ, যুদ্ধ, বিজয় এবং বংশের উত্থান-পতনসহ সবকিছু লেখা হয়েছে।
ইতিহাস অনুযায়ী, সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন হিজরি সন ছিল ৯৬৩ এবং বাংলা সনও ছিল ৯৬৩ বঙ্গাব্দ।
এই আইন- ই–আকবরী বইয়ে আবুল ফজল বাংলার ইতিহাস ও ভৌগোলিক বর্ণনা লিখেছেন। একইসাথে ১৯টি ভাগে বিভক্ত বাংলার কৃষি ও শিল্প উৎপাদনসহ কর আরোপের বিস্তারিত বিবরণ লিখেছেন।
এই বইয়ের কথা উল্লেখ করে জাতীয় জ্ঞানকোষ ‘বাংলাপিডিয়া’ বলছে, মুঘল আমলে বাংলা সুবা ১৯টি সরকারে এবং প্রতিটি সরকার অনেকগুলো মহল বা পরগনায় বিভক্ত ছিল। সে সময় মোট করের পরিমাণ এক কোটি টাকারও বেশি ছিল।
এ কারণে সম্রাট আকবর তখন বাংলা সন প্রবর্তন করেছেন, পহেলা বৈশাখ দিয়ে যার শুরু।
বাংলা সন নিয়ে গবেষণা করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক শারমিন রেজওয়ানা জানান, সম্রাট আকবর বঙ্গাব্দ যে সন চালু করেছিলেন সেটি কৃষকদের কর দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, ‘তখন কর দেওয়ার সময়ে ফসল উঠতো না। ফলে কৃষকদের কর দিতে সমস্যা হতো। সে কারণেই সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখের প্রথা প্রচলন করেন।’
ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায়, আকবরের আগে দুইজন মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন খিলজী এবং শের শাহ ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন করেছিলেন।
পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরই ভূমি রাজস্ব পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাকে সাজাতে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রাজা টোডরমলকে দেওয়ান পদে নিয়োগ দেন তিনি।
পরে আকবরের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেন রাজা, যা টোডরমল সুপারিশ বা টোডরমল বন্দোবস্ত নামেই পরিচিত।
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মুঘল শাসকরা রাজস্ব আদায়ের জন্য জমিদার ও তালুকদার নিয়োগ করতেন।
মুঘল বাংলায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রথম বাংলা সন গণনা করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে খাজনা আদায়ের জন্য পূর্বের তারিখ দেখিয়ে এই গণনা কার্যকর করা হয়েছিল ১৫৫৬ সাল থেকে।
যেভাবে ভূমি কর পরিশোধ করতে হয়
ভূমি উন্নয়ন কর হালসনের হিসাব অনুযায়ী পরিশোধ করতে হয় বলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি বছরের ভূমি উন্নয়ন কর ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জরিমানা ছাড়া আদায় করা যাবে।
কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবার-ভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ আট দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। তবে এই জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সম্পূর্ণ কৃষিজমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে বলে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।
যা বলছে সরকার
গত বছর ১৯৭৬ সালের ভূমি উন্নয়ন কর আইন রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। এটি ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২৩ নামে পরিচিত।
ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ২০২৩ সালে যে আইন হয়েছে সেটার আর্থিক কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই হিসাব সহজ করার জন্য এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বাংলা সনে ভূমি কর আদায়ের ৪৪০ বছরের পুরনো রীতি পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিয়ে চন্দ বলেন, যেহেতু এটা সরকারের রেভিনিউ সেকশন তাই অর্থবছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটা পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের অর্থবছর হচ্ছে পহেলা জুলাই থেকে ৩০শে জুন। ফলে হিসাব - নিকাশ সহজ করার জন্য এ পরিবর্তন।
ফলে কেন এই পরিবর্তন আনা হয়েছে সেই যুক্ত তুলে ধরে চন্দ বলছেন, ‘মুঘল আমলের মতো কৃষির ফলনের সময় এখন নেই তা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমাদের দেশে প্রধান হয়ে গেছে গ্রীষ্মকালীন ধান। আমনের থেকে ফলন এখন বোরোর বেশি।’
“এই ধান জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকেই উঠে যায়। এখন অর্থনীতি এমন হয়ে গেছে কৃষকদের বারো মাসই তরিতরকারি, সবজি, ফলমূল সবকিছু হচ্ছে। বারো মাসই ইনকাম থাকে। এখন সারা বছর কৃষকের ইনকাম যা আসে প্রয়োজন মিটিয়ে তারা খাজনা দিতে পারবে। বিশেষ করে জুন মাসে কর দিতে পারবে কারণ ধান উঠে যাচ্ছে মে মাসের মধ্যে। ফলে ধান উঠলে তারা খাজনা দিতে পারবে,” বলেন চন্দ।
- ট্যাগ সমূহঃ
- মুঘল
![৪০০ বছর আগে মুঘলদের তৈরি যে নিয়ম আজ থেকে বদলে যাচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)