ঢাকা বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫ - ৩:১২:৩৬ এএম

৪ মাস পর ব্যাংক আমানতে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়ালো

১২ মার্চ, ২০২৫ | ১:৭ পিএম

৪ মাস পর ব্যাংক আমানতে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়ালো

ছবি: সংগ্রহ

দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন প্রবৃদ্ধির পর দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের হার আবারও বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮.২৮ শতাংশে, যা বিগত চার মাসের তুলনায় বেশি।

 

 


বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪৪ শতাংশ। এর আগে, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে এই হার ছিল যথাক্রমে ৭.২৬ শতাংশ, ৭.২৮ শতাংশ এবং ৭.৪৬ শতাংশ। তবে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ হার ছিল মাত্র ৬.৮৬ শতাংশ, যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

 

 


ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তারল্য সংকট এবং কিছু ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থার অভাবের কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছিল। সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাশরুর আরেফিন বলেন, "অনেক ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম ও তারল্য সংকটের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছিল। তবে ভালো ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে।"

 

 


২০২৩ সালের শেষের দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট ও রিজার্ভের পতনের ফলে অর্থনীতি চাপে পড়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে কিছু অর্থনৈতিক সূচক উন্নতির ইঙ্গিত দিলেও, অভ্যন্তরীণ বেসরকারি ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে তেমন ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মোট ব্যাংক আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুস্থ আর্থিক প্রবৃদ্ধির জন্য আমানতের হার ১০ শতাংশের বেশি থাকা উচিত, এবং বাংলাদেশের মতো দেশে এটি ১২ থেকে ১৪ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন।

 

 


একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "মানুষ সাধারণত দৈনন্দিন খরচের পর অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও, আয় বাড়েনি ৫ শতাংশও। ফলে মানুষের সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমেছে।"

 

 

তিনি আরও বলেন, "কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, যার ফলে তারা ব্যাংকে টাকা রাখার পরিবর্তে হাতে নগদ অর্থ রাখছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারলে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।"

 

 


২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে থাকা প্রায় ২ হাজার ১৪০ কোটি টাকা পুনরায় ব্যাংকিং চ্যানেলে ফিরেছে। জানুয়ারির শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ২.৭৪ লাখ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ২.৭৬ লাখ কোটি টাকা।

 

 

 

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং সুদের হার প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে থাকলে, ভবিষ্যতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।

৪ মাস পর ব্যাংক আমানতে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়ালো