ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:১৫:১২ পিএম

৮৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার পণ্য কেনার অনুমোদন

২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৪১ এএম

৮৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার পণ্য কেনার অনুমোদন

ছবি: সংগ্রহ

দেশের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানি বাড়াচ্ছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় পাঁচটি পণ্য কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব পণ্য কিনতে ব্যয় হবে ৮৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বুধবার (২৮ নভেম্বর) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত ওই সভায় এসব অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন ও ৩০ হাজার টন ডাল ও চিনি কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে খরচ হবে ৪২১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ৫০ হাজার টন গমে ১৭১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সারে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যার মোট ব্যয় হবে ৮৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

 

জানা গেছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড, মেঘনা সুগার রিফাইনারি ও নাবিল নাবা ফ্রুটস লিমিটেড থেকে সয়াবিন, চিনি ও ডাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।

 

বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন হয়। যেখানে লিটার প্রতি ১৬৬ টাকা হিসাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ২০ হাজার টন চিনি (৫০ কেজির বস্তায়) ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। ১১৫ দশমিক ৮৫ ও ১১৬ দশমিক ৮৫ টাকা কেজি হিসেবে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কিনবে সরকার। যেখানে ৯৭ টাকা ৯৭ পয়সা কেজি হিসাবে মোট ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে ব্যয় হবে ২৪৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

 

দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে এই সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

 

বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশের কাছ থেকে অষ্টম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এই সার কিনবে। এতে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

 

সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা মোতাবেক কাফকো থেকে ৫ দশমিক ৪০ লাখ টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অষ্টম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো প্রাইস অফার পাঠায়।

 

কাফকোর সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক সারের মূল্য নির্ধারণ করে অষ্টম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি টন ৩৩৫ দশমিক ৬২৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ১ কোটি ৬৮ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলারে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২০ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠক সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এই সার কিনবে। এতে ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

 

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে দশম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি টন ৩৪৬ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে এতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৪ লাখ ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

 

অন্যদিকে বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে সুইজারল্যান্ড থেকে আরও ৫০ হাজার টন গম কেনার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

 

জানা গেছে, বৈঠকের নির্ধারিত প্রস্তাবের বাইরে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার টন গম আমদানির একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি আলোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের মেসার্স অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টান্যাশনাল থেকে ১৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ৫০ হাজার টন গম কেনা হবে। প্রতি টন গমের মূল্য ধরা হয়েছে ২৮৬ দশমিক শূন্য ৮ মার্কিন ডলার।

 

টিসিবির পণ্য পাবেন ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের বাইরে আরও ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই কার্যক্রম চালাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। অনুমোদনের ফলে টিসিবির আগামী পণ্য বিক্রির কার্যক্রমে পোশাক শ্রমিকরাও যুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

 

বুধবার অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হয়, ১০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ওঠার কথা ছিল। এর উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওটা আমরা অনুমোদন দিয়েছি। টিসিবি ওটা করবে। টিসিবির রেগুলোর যে প্রোগ্রাম আছে ১ কোটি পরিবারের জন্য, ওরা বোধ হয় ওখান থেকে সংস্থান করতে পারবে।

 

কবে নাগাদ গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হবে? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, টিসিবি যখনই বিক্রি কার্যক্রম শুরু করবে, এটা করব। টিসিবির পরবর্তী বিক্রি কার্যক্রমের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকরা সংযুক্ত থাকবেন। এটা ঢাকার আশপাশের বিশেষ এলাকার জন্য।

 

এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নিম্নআয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ দিতে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে ভোজ্য তেল, মসুর ডাল ও চিনি বিক্রি করছে সরকার। সেই সঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের মাধ্যমে ৫ কেজি চাল বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে নিম্নআয়ের জনগণ সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছে।

 

সূত্রটি জানিয়েছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের ডিওর ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভারসহ ঢাকার কাছাকাছি শিল্পগুলোর গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে টিসিবির নির্ধারিত পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

৮৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার পণ্য কেনার অনুমোদন