ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:০৫:৪৬ পিএম

৮ প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম নিয়েছেন ২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা

১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১২:১ পিএম

৮ প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম নিয়েছেন ২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা

ছবি: সংগ্রহ

দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম নিজের এবং বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন। এ ছাড়া আরও ডজনখানেক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে অর্থ বের করে নেওয়ার পরিমাণ পৌনে চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে। এসব অর্থের বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এস আলম ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আভিভা থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

 

এস আলমের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলে নেওয়ার মাধ্যমে তিনি তার প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এবং এমডিকে জোরপূর্বক অপসারণ করে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়। এরপর থেকেই ব্যাংক থেকে অস্বাভাবিক পরিমাণ অর্থ বের করতে থাকেন তিনি। একই কৌশলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক দখলে নিয়ে সেখান থেকেও অর্থ আত্মসাৎ করেন।

 

এস আলমের অর্থ পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধানে এখন যৌথ কমিশন গঠন করা হয়েছে, যাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি) একত্রে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ১২টি দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার পাচারকৃত অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব অর্থ বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

 

রাজস্ব কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছিল, যার মধ্যে বর্তমানে স্থিতি ২৬ হাজার কোটি টাকা।

 

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে গেছে। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। বর্তমানে এস আলম ও তার সহযোগীদের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করছে একটি বিদেশি অডিট ফার্ম।

 

এস আলমের বিরুদ্ধে শুধু অর্থ পাচারের অভিযোগই নয়, বরং সংঘবদ্ধ অপরাধ, প্রতারণা, জালিয়াতি এবং হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তার বিরুদ্ধে এক লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে। তার এই কর্মকাণ্ড দেশের ব্যাংকিং খাতকে ভয়াবহ সংকটে ফেলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

৮ প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম নিয়েছেন ২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা