ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৫২:২১ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

৪ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

সরকারি চার্জ ও সঠিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় এয়ার টিকিটের দাম কমতে পারে - কামরুল ইসলাম

৪ জানুয়ারি, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম

সরকারি চার্জ ও সঠিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় এয়ার টিকিটের দাম কমতে পারে - কামরুল ইসলাম

দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য সরকারি চার্জ কমানো হলে তাদের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বাড়বে এবং ফ্লাইটের ভাড়া কমবে। ভ্যাটবন্ধু নিউজ পোর্টাল জনগণ ও ব্যবসায়ীদের ভ্যাট-ট্যাক্স সম্পর্কে সচেতন করার মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের হার বাড়বে এবং সার্বিকভাবে দ্রব্যমূল্য কমবে বলে আশা করছেন কামরুল ইসলাম। বাংলাদেশ এভিয়েশন এবং ভ্যাটবন্ধু নিউজ পোর্টাল এর কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন, কামরুল ইসলাম, জেনারেল ম্যানেজার পাবলিক রিলেশন, ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স। ইন্টারভিউ নিয়েছেন জোবায়ের রুবেল। 

ইন্টারভিউ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলেও আরও একটি স্বাধীন রানওয়ে দরকার।
  • দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য সরকারি চার্জ কমানো দরকার।
  • ভ্যাটবন্ধু নিউজ পোর্টাল জনগণ ও ব্যবসায়ীদের ভ্যাট-ট্যাক্স সম্পর্কে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশের এভিয়েশন নিয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের প্রথমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শিতার কথা বলতে হয় কারণ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মাত্র ১৮ দিনের মাথায় তিনি বাংলাদেশ বিমান গঠন করেন। ৪ই জানুয়ারি ১৯৭২ তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক এয়ারলাইন চালু হয়। 

যদিও একটা লম্বা সময় মানে স্বাধীনতার পরে প্রায় ২৫-২৬ বছর শুধু বাংলাদেশ বিমানে কাজ করেছে। ‌এর এরপর গত ৫২ বছরে বহু এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে সফলভাবে কাজ করছে। যদিও বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন প্রমিনেন্ট এয়ারলাইন্সকে আমরা বন্ধ হয়ে যেতেও দেখেছি। তারা বন্ধ হয়ে গেলেও; অন্যদের জন্য বিজনেস অপরচুনিটি তৈরি করে গেছে। সেই যাত্রীরা এখনো ফ্লাই করছে বিভিন্ন বিমানে। 

সেই সব যাত্রীদের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, এয়ার এস্ট্রা সহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স ন্যাশনাল এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে যাচ্ছে। আকাশ পথের যাত্রা আরো সমৃদ্ধ করার জন্য সব সময় সরকারের ভূমিকা ছিল এবং আছে। 

আমাদের সব সময় দাবি ছিল সরকার যেন শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক না ভেবে ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টগুলো নিয়েও ভাবে যেমন যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট সহ দেশের সবগুলো এয়ারপোর্টগুলো মান উন্নয়ন করে এটা শুধুমাত্র প্যাসেঞ্জারদের জন্য নয় এয়ার কোম্পানিরগুলোর জন্য সমানভাবে জরুরি। এই ফ্যাসালিটিগুলো ডেভেলপ করলেই একটা দেশের সার্বিক এয়ারলাইন্স বিজনেসের কোয়ালিটি নিয়ে এগিয়ে যাবে। 

বর্তমান যে থার্ড টার্মিনাল হয়েছে এটা আমাদের জন্য একটা স্বপ্নের যাত্রার মত। ফাস্ট এবং সেকেন্ড টার্মিনাল আমাদের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না দুই টার্মিনাল থেকে আমরা যে ফ্যাসালিটিগুলো পাচ্ছিলাম সেগুলো ছিল অনেক আগে তৈরি করা তাই আধুনিক সুযোগ সুবিধার অভাব ছিল অনেক বেশি। যেটা থার্ড টার্মিনার মাধ্যমে এই আধুনিক সুযোগ সুবিধাগুলো তৈরি করা হয়েছে। এই সুবিধাগুলো আমাদের এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোকে যেমন সমৃদ্ধ করবে তেমনি প্যাসেঞ্জারদের যাত্রাকে আরও সহজ ও আনন্দময় করবে। 

তবে থার্ড টার্মিনালে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সুবিধা পেতে হলে আমাদেরকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরো একটি রানওয়ে প্রয়োজনের তাগিদে সবার জন্য দরকার। 

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং সিভিল এভিয়েশন মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমাদের এখানে বর্তমানে স্পেস এর অভাবে একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ে করার সুযোগ নেই। তবে একটি ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ে হওয়ার সুযোগ আছে। আমি মনে করি এটা দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তাহলে আমাদের যে ফ্লাইট ঢিলে হয় অথবা কোন কারনে যদি রানওয়ে ব্লক হয়ে যায় অথবা কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আরেকটি রানওয়ে ব্যবহার করে চলাচলটা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। 

থার্ড টার্মিনাল থেকে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা পেতে হলে অন্তত একটি ডিপেন্ডেন্ট রানওয়ে আমাদেরকে করতে হবে। 

ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৩৪টি এয়ারলাইন্স অপারেশনে আছে। থার্ড টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গভাবে ওপেন হলে আরো ১২-১৩টি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে তাদের অপারেশন শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। অন্যদিকে বর্তমানে যেসব এয়ারলাইন্স কোম্পানি চালু আছে তারাও কিন্তু ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। 

নতুন এয়ারলাইনস এবং এয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রানওয়ের উপরে কিংবা এয়ার ফিল্টে যে চাপ পরবে সেই চাপ নেওয়ার পুরোপুরি ক্ষমতা আমাদের বর্তমানে আছে কিনা সেটি একটু বিবেচনা আনা দরকার কর্তৃপক্ষের। আমি আশা করি বর্তমান সিভিল এভিয়েশন এই বিষয় নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে। 

এয়ারলাইন্সে অনেক ধরনের ট্রাভেল ট্যাক্স এয়ারপোর্ট এর সার্ভিস ট্যাক্স বহন করতে হয় কখনো ডুয়াল ট্যাক্সের সুযোগ তৈরি হয় কিনা সেটা সরকারের বিশেষ বিবেচনায় আনা দরকার রয়েছে। 

সরকার আমাদের এডভাইস করেছে, প্যাসেঞ্জারদের থেকে যেন ট্যাক্স আদায় করে সরকারের ট্যাক্স খাতে আমরা যেন সেটা জমা নেই। আমার সেটা মানছি। 

এয়ারলাইন্স পরিচালনা ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সরকারি চার্জ পরিশোধ করতে হয় এরমধ্যে এরোনোটিকাল চার্জ হয়েছে, ল্যান্ডিং, পার্কিং, সিকিউরিটি, ও রুট নেভিগেশনের চার্জগুলো অনেক অংশে এয়ারক্রাফ্ট এর ওয়েটের উপরে নির্ভর করে। 

এবং বাংলাদেশী এয়ারলাইন্স এর এই চার্জগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে এয়ার সিভিল এভিয়েশনের প্রতি আমাদের বরাবরই কিছু অনুরোধ হচ্ছে দেশি এয়ারলাইন্স এবং বিদেশি এয়ারলাইন্স এ চার্জে মধ্যে কিছু ডিফারেন্স করার জন্য।

যেমন ধরুন আমাদের ইউএস-বাংলার একটি এয়ারক্রাফ্ট চট্টগ্রাম গিয়ে নামল এতে আমাদের ধরুন ৭ হাজার টাকা চার্জ দিতে হয় ওই একই বিমান যদি চেন্নাই থেকে এসে বাংলাদেশে নামে আমাদেরকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা চার্জ দিতে হয়। পার্থক্যটা এতটাই বেশি। পলিসি মেকাররা বলছেন ডমেস্টিক এয়ার হওয়ার কারণে এ চার্জ কম এবং ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট এর কারণে এর চার্জ প্রায় ৯-১০ টাইম বেড়ে যাচ্ছে। 

আমাদের বরাবরই প্রস্তাব হচ্ছে দেশীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে আমাদেরকে দেশি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট এর ক্ষেত্রে একটি চার্জের মধ্যে আনা হোক। এই প্রস্তাবটা হচ্ছে আমাদের দেশি এয়ারলাইন্স সেই অগ্রাধিকারের জন্য। যেন দেশের এয়ারলাইন্সগুলো ভালো করতে পারে তাদের সেবার মান আরো বাড়াতে পারে। 

এই ট্যাক্স যদি কম হয় এটা ভাড়ার উপর একটা প্রভাব ফেলবে। এতে অবশ্যই ভাড়া কমিয়ে রাখার সুযোগ তৈরি হবে এর ফলে আরও বেশি মানুষ এয়ারে ট্রাভেল করার সুযোগ পাবে। জনগণের স্বার্থে এবং বাংলাদেশী এয়ার লাইন্স গুলোকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই পরিবর্তন করা যেতেই পারে এই ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে আমি অনুরোধ করছি যদি কোন সুযোগ থাকে তাহলে যেন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে। 

যদি এটা না করা হয় বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ক্ষতির মুখে পড়লে যেভাবে বন্ধ হচ্ছে তাতে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশে অপারেশন বাড়াতে শুরু করলে দেশের জন্য অবশ্যই ক্ষতি কারণ হবে। এই কাজের ফলে দেশের মানুষ এবং দেশি এয়ারলাইন্স সবাই লাভবান হবে।

শুধুমাত্র ভ্যাট নিয়ে, ভ্যাটের পলিসি নিয়ে, ভ্যাটের ন্যায্যতা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে এবং ব্যবসায়ীদের কাছে ভ্যাট সহজীকরণ বার্তা পৌঁছে দেওয়া; মানুষের ভ্যাট বিষয়ের সচেতন করা জন্য একটা পত্রিকা আমি বলবো অবশ্যই এটা কল্যাণকর। এরকম আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা আমার জানা নেই। 

আমি মনে করি আমরা যারা সাধারণ জনগণ আছি তাদের মধ্যে ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে যে ভীতি সেটা অবশ্যই দূর হবে। আমাদের ভ্যাট নিয়ে যে অধিকার সেটার বিষয়ে সচেতন হতে পারব। আমি আশা করি ভ্যাটবন্ধুর নিউজ পোর্টাল সাধারন মানুষের জন্য ভ্যাট এবং ট্যাক্সের বিষয়গুলো খুব সাধারণভাবে বুঝিয়ে উপস্থাপন করবেন। 

একই সাথে ব্যবসায়ীদের জন্যও পত্রিকাটি অনেক কার্যকরী হবে কারণ ক্রেতার থেকে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যেমে ব্যবসায়ীকে ট্যাক্স আদায় করতে হয় এবং সরকারকে দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ার  মধ্যে ডুয়াল ট্যাক্সেশন এর ব্যাপারগুলো ঘটে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে শুধু যে ব্যবসায়ী লাভবান হবে তা নয় পণ্যের দামও কমে আসবে এতে সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে।

এরফলে শুধুমাত্র আমরা সাধারন মানুষ এবং ব্যবসায়ের লাভবান হব তা নয় এর মাধ্যমে দেশের সরকারও লাভবান হবে। 

ভ্যাট-ট্যাক্স বিষয়ক এই সচেতনতা কর ফাঁকি দেওয়া প্রবনতা আমরা শুনি সেটা অনেকাংশে কমে আসবে। এর ফলে কিন্তু আমাদের জিডিপিতেও একটা প্রভাব পড়বে। 

আমি মনে করি আমাদের সবারই ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করে এটা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করেছে যারা আমাদের কাছ থেকে ভ্যাট কালেক্ট করছে তারাই। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এখন জনগণ কেউ জানতে হবে কোন পণ্যগুলোর উপরে ভ্যাট এপ্লিকেবল, কোন কোন পণ্যের উপরে ডুয়াল ট্যাক্সেশন সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোন পণ্যগুলোর উপরে ভ্যাট এপ্লিকেবল নয় এবং কোন পণ্যগুলোর উপরে কত শতাংশ; সেটা এখন সবার জানতে হবে। তবেই আমরা প্রত্যেকেই সচেতন হতে পারব এবং প্রত্যেকে সচেতন হলে এই ভ্যাট সেক্টরে পরিবর্তন আসবে। 

আমি আশা করছি ভ্যাটবন্ধু নিউজ পোর্টালটি জনগণ এবং ব্যবসায়ীকে এই সচেতনতা করতে আরো কাজ করবে। আমরা জিডিপি নিয়ে যেমন চিন্তা করি, আমরা দেশের সার্বিক বাজেট নিয়ে চিন্তা করি এই বাজেটের সবথেকে বড় অংশ আসে আমাদের ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে। তাই বলব ভ্যাট ট্যাক্স আদায় যদি সঠিক হয় তাইলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ওপরে একটা বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আমি ভ্যাটবন্ধু পোর্টালকে বলবো তারা যেন কাজের পরিধি আরও বৃদ্ধি করে মানুষকে সচেতন করতে ধারাবাহিকভাবে বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলে। ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করে সঠিক ভ্যাট প্রদানের কথা বলে এবং যারা ভ্যাট আদায় করে তাদেরকে যেন হয়রানি মুক্তভাবে ধারা আদায়ের পদ্ধতির কথা বলে। 

এর মাধ্যমে ভ্যাটবন্ধু নিউজ পোর্টাল যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি এগিয়ে যাবে দেশ।

সরকারি চার্জ ও সঠিক ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় এয়ার টিকিটের দাম কমতে পারে - কামরুল ইসলাম