ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দাম বাড়ালেও যশোরে ধান সংগ্রহ হয়েছে ৮ শতাংশ
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম
![দাম বাড়ালেও যশোরে ধান সংগ্রহ হয়েছে ৮ শতাংশ](https://i.vatbondhu.com/images/wp-content/uploads/2024/02/00000-2.jpg)
২৮ ফেব্রুয়ারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। সে হিসাবে গত ২৩ নভেম্বর শুরু হওয়া এ অভিযানের বাকি আছে মাত্র ২৪ দিন। অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৮ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য অধিদপ্তর। যদিও এবার ধানের দাম কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। বাকি যে সময় আছে, তাতে আর ধান সংগ্রহ করা যাবে বলে মনে করছেন না খাদ্য কর্মকর্তারা।
কৃষকের দাবি, বাজারে ধানের দাম বেশি ও খাদ্যগুদামে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় বলে ধান বিক্রিতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) জেলায় কৃষকের কাছ থেকে ৫ হাজার ২৮৩ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলার খাদ্যগুদামগুলোয় ধান সংগ্রহ হয়েছে ৪১৮ টন। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৮৭১ টন। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ১৪ হাজার ৪৬৭ টন এবং আতপ চাল ৪০৪ টন। এ সময়ে সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ১২ হাজার ২৪০ টন। তবে কোনো আতপ চাল সংগৃহীত হয়নি। সেদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য ১০২ জন এবং আতপ চাল সরবরাহের জন্য মাত্র একজন চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা, আতপ ৪৩ এবং ধান ৩০ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষকদের একটি করে কৃষি কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় এবং তার চাষ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেয়া হয়। একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারেন। ধান কেনার পর গুদাম থেকে কৃষককে ওজন মান মজুদ সনদ দেয়া হয়। কৃষক ওই সনদ ব্যাংকে তার নিজস্ব ১০ টাকার হিসাবে জমা করার পর চেক দিয়ে ধান বিক্রির টাকা তোলেন।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, আটটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলা, শার্শা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মণিরামপুর, বাঘারপাড়া এবং কেশবপুর উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে এবং অভয়নগর উপজেলায় ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা হচ্ছে। বর্তমানে জেলার হাটবাজারে মোটা ধান ১ হাজার ২৪০-১ হাজার ২৫০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ২৭০-১ হাজার ২৮০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। গুদামে ধানের নির্ধারিত দাম ১ হাজার ২০০ টাকা মণ।
দাম বাড়িয়েও ধান সংগ্রহ আশানুরূপ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুণ্ডু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমন সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে বেচাকেনা হচ্ছে। সংগ্রহ অভিযানের শুরুতে বাজারে ধানের দাম কম ছিল। তখন কিছু ধান সংগ্রহ হয়েছে। খাদ্য গুদামগুলো উপজেলা সদরে হওয়ায় ধান পরিবহনে কৃষকের ব্যয় বাড়ে। শ্রম ও সময়ও বেশি লাগে। এজন্য কৃষক বাড়ি থেকে এবং পাশের বাজারে প্রায় একই দামে ধান বিক্রি করছেন। তাতে পরিবহন ব্যয়, শ্রম ও সময় কম লাগছে। এ কারণে কৃষক খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। সামনে যে সময় আছে, তাতে আর ধান সংগ্রহ করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে চুক্তিবদ্ধ চালকলের মালিকরা ঠিকমতো চাল সরবরাহ করছেন। লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ চাল সংগৃহীত হবে।’
গুদামে ধান দিতে গেলে কৃষককে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। তাদের অভিযোগ, গুদামে ধান নিয়ে গেলে ওই কৃষকের নাম উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কৃষক তালিকায় আছে কিনা, তা দেখা হয়। তালিকায় নাম না থাকলে কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন না। ২০১০ সালে কৃষি বিভাগ কৃষকের তালিকা তৈরি করে। এরপর তালিকাভুক্ত কৃষককে কৃষিকার্ড দেয়া হয়। কিন্তু তালিকাটি পরে আর হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে নতুন করে ধান-চাষ করা কৃষক তালিকাভুক্ত হননি।
এছাড়া খাদ্যগুদামে শুধু ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনা হয়। কৃষক গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতার অজুহাতে ফেরত দেয়া হয়। এ কারণে গুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষকের লোকসান হয়। মান খুব ভালো না হলে খাদ্যগুদামে ধান কেনা হয় না। তবে ধানের মান কিছুটা খারাপ হলেও কৃষক বাজারে যাচাই করে বিক্রি করতে পারেন।
গুদামে ধান সরবরাহ না করার কারণ জানতে চাইলে ঝিকরগাছার মাটিকুমড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গুদামে ধান বিক্রি করা বেশ ঝামেলার। তাছাড়া মোটা এবং চিকন ধানের বাজার দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, শ্রমও ব্যয় হয় বেশি। এজন্য কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।’
![দাম বাড়ালেও যশোরে ধান সংগ্রহ হয়েছে ৮ শতাংশ](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)