ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৬ মার্চ, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
যমুনার তীরে গড়ে উঠছে 'স্বপ্নের সিরাজগঞ্জ', আগামী বছর উৎপাদনে যাচ্ছে
১৬ মার্চ, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম
![যমুনার তীরে গড়ে উঠছে 'স্বপ্নের সিরাজগঞ্জ', আগামী বছর উৎপাদনে যাচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/wp-content/uploads/2024/03/untitled-47-20210428145407.jpg)
সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে যমুনা নদীর তীরে গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বেসরকারি পর্যায়ে দেশের বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক কেন্দ্রটি আগামী বছরের শুরুতেই পণ্য উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছেন উদ্যেক্তারা।
ইতোমধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাক্টরি তৈরির জন্য প্রায় ১১০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে মোট ১,০৪১ একর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে অঞ্চলটি।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সরেজমিন অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করে দেখা যায়, মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ। ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে মাটি সমান করার কাজ। ট্রাকে করে ইট নেওয়া হচ্ছে ভেতরের রাস্তা তৈরির জন্য। জোনের ভেতরে কৃত্রিম খাল তৈরি করা হচ্ছে যমুনার পানি আনতে, একাধিক খননযন্ত্রে চলছে অবিরাম খনন। চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ।
এছাড়া, ঢাকা-বগুড়া হাইওয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলের আন্তঃসংযোগের জন্য সরকারিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ফ্লাইওভার।
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন লিমিটেডের (এসইজেডএল) পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, "আমাদের মাটি ভরাটের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ।"
তিনি বলেন, "আমরা আশা করছি, আগামী ২০২৫ সালের শুরুতে এখানে প্রথম শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে। 'অ্যাক্টিভ কম্পোজিট মিলস' ২ একর জমি নিয়েছে। তাদের প্লট বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা সহ দুই তিনটি প্রতিষ্ঠান আগামী মাস থেকে ভবন নির্মাণের জন্য যে কাজ প্রয়োজন সেটা শুরু করবে। এ বছরের মধ্যে তাদের কাজ শেষ হবে বলে আশা করি। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সাল নাগাদ এখানে সব মিলিয়ে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।"
সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত তাঁতজাত বস্ত্র, গরু-মহিষের মাংস, খামারে উৎপাদিত দুগ্ধ, শর্ষে ও মধুসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য এবং যমুনা ও পাশ্ববর্তী নদনদী এবং চলনবিলের মিঠা পানির মাছ ও চরাঞ্চলের মরিচ, পাট, ভুট্টাসহ নানান রকম কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজত করে খুব সহজেই রপ্তানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। উন্নত বৈশ্বিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরি করলে তা গোটা উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আস্থার কেন্দ্র হবে।
শেখ মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রকল্প এলাকায় অবিরাম বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করা হবে। যমুনা নদীর পাশে হওয়ার বিনিয়োগকারীরা শিল্পে বিপুল পরিমাণ উচ্চমানের পানি ব্যবহার করতে পারবেন।
সুবিধাজনক রেলপথ তৈরির জন্য সাইটের কাছাকাছি একটি রেলওয়ে আইসিডি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত রেল নেটওয়ার্ক মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি সিরাজগঞ্জকে সেভেন সিস্টারস এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেও সংযুক্ত করে।
"আমরা চাই বাড়িতে বসে চাকরিতে যাওয়া যায় এমন কাজ। এলাকায় কাজ পেলে আমরা ঢাকায় কেন আসবো? এতে আমাদের খরচও কমবে, আবার বাবা-মা পরিবারসহ এলকায় থাকতে পারবো," যোগ করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জের লাবলু বাবুল কম্পোজিট টেক্সটাইলের নির্বাহী পরিচালক গোলাম সরোয়ার জানান, তিনি তার কারখানাটি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছেন।
তিনি আরও বলেন, "এখানকার শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা সারাদেশেই বিখ্যাত, এখন কারখানাটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে হলে কমপ্লায়েন্স পদ্ধতি অনুসরণ করে এগুলো তৈরি করা হবে। এতে রপ্তানি বাড়বে।"
২০১৮ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ১১টি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়ামকে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রদান করে। এ অঞ্চলে টেক্সটাইল এবং নিটওয়্যার, ফুড প্রসেসিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, এলপিজি ম্যানুফ্যাকচারিং, স্টিল ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ফিশারিশিপ ও ফিশারিজিং শিল্পের সুযোগ থাকলে বলে আশা করা হচ্ছে।
এসব কোম্পানির বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের অন্তর্ভুক্ত।
এসইজেডএলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের অনেক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এখানে প্রায় ৪০০ মতো প্লট তৈরি হবে। এর মাস্টার প্লান ও সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি)। এখন ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান করছে জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (জেডিআই)।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন জানান, তারা সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগকে অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, শিল্প নগরীটিতে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির চমৎকার সুযোগ রয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূলে কাজ করবে।
শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, "সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্লাটিনাম গ্রিন কনসেপ্টের ওপর গড়ে উঠবে। জোন তৈরিতে আমরা ৩,২০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করবো।"
"ভুটান, নেপাল , ভারতের সেভেন সিস্টার এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছে। এখানে নদীবন্দর হচ্ছে, ইনল্যন্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) হচ্ছে, ট্রেনলাইন আছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু হচ্ছে, ফোর লেনের রাস্তা হচ্ছে। এখানে যমুনা নদীর মিষ্টিপানি আছে। যমুনা নদীর পানি ওয়াটার ট্রিপমেন্টপ্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখান থেকে ফ্যাক্টরিতে সাপ্লাই দেওয়া হবে। এসব সুবিধার জন্য বিনিয়োগকারীরা বেশ আগ্রহও দেখাচ্ছে," যোগ করেন তিনি।
পল্লী কর্ম সহায়ক সংস্থা (পিকেএসএফ)-এর তথ্য মতে, সিরাজগঞ্জের তামাই ও বেলকুচি এলাকাতেই রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২৭৫টি ডাইং ও প্রসেসিং মিল, প্রতিটি মিল হতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার লিটার তরল বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে, যা কোনো ধরনের শোধন ছাড়াই চলে যাচ্ছে আশেপাশের জলাশয়ে অথবা কারখানার পাশের কৃত্রিম জলাধারে।
শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, "আমরা ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের জন্য ১০০ একর জায়গা রাখবো। সেখানে এই ডাইং প্রতিষ্ঠানও থাকবে। আমরা তাদের বলবো এখান থেকে সুতায় রং করে নিয়ে যেতে, এতে আমাদের কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে (সিইটিপি) এই পানি ট্রিটমেন্ট হবে। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।"
তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না করে আধুনিক শিল্পনগরীর সুযোগ-সুবিধা রেখে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফ্যাক্টরিতে ব্যবহারের জন্য পানি নেওয়া হবে যমুনা নদী থেকে। মোট জমির ৬০ শতাংশ জায়গায় কারখানা তৈরির জন্য ৪০০ মতো প্লট করা হচ্ছে। বাকি জমিতে পার্ক, বনায়ন, হাট, বাজার, পুকুর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে। শ্রমিকদের জন্য থাকবে অত্যানুধিক ডরমেটরি।
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনে অনেক নামকরা স্থানীয় কোম্পানি জমি বরাদ্দ পেয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে— অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, ডায়নামিক ড্রেজিং, নিট এশিয়া, এমকে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, রাতুল ফ্যাব্রিক, অ্যাকটিভ কম্পোজিট মিলস, রাইজিং হোল্ডিংস, রাইজিং স্পিনিং মিলস, মেরিনা প্রপার্টিজ, টেক্সট টাউন, স্কয়ার এক্সেসরিজ এবং স্কয়ার ইলেকট্রনিক্স।
![যমুনার তীরে গড়ে উঠছে 'স্বপ্নের সিরাজগঞ্জ', আগামী বছর উৎপাদনে যাচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)