ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
জাতীয় গ্রিডে লক্ষ্যমাত্রার কেবল ৬.৬৩ শতাংশ গ্যাস যুক্ত হয়েছে
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:৩৭ পিএম

স্থানীয় উত্তোলন বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে নতুন করে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা পেট্রোবাংলার। এজন্য প্রায় দেড় বছর আগে সংস্থাটি ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নেয়। চলতি বছর পর্যন্ত যদিও খনন হয়েছে কেবল ১৪টির। আর পরিকল্পনা যতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তাতে গ্রিডে গ্যাস যুক্ত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
পেট্রোবাংলা কূপ খননের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা অনেকটাই দুঃসাধ্য ও চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ বছরে গড়ে তিনটি করে গ্যাসকূপের কাজ হলেও বাকি সময়ে চার-পাঁচটির বেশি খনন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া যেসব কূপের কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর বেশির ভাগই পুরনো। অর্থাৎ খননের নামে মূলত সেগুলো সংস্কার করবে পেট্রোবাংলা। তাতে লক্ষ্য অনুযায়ী গ্যাস মিলবে কিনা তা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের সংশয়।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, ‘পেট্রোবাংলার ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা উচ্চাভিলাষী। সময় ও লক্ষ্যমাত্রার কথা চিন্তা করলে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানে নেয়া পরিকল্পনা আরো বাস্তবধর্মী হওয়া উচিত। যাতে কূপ খনন কম হলেও পেট্রোবাংলা কিংবা গ্যাস উত্তোলন কোম্পানিগুলো প্রকৃতপক্ষে সফলতা পায়, সেদিকটায় আরো খেয়াল রাখা দরকার।’
প্রবন্ধটির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে পেট্রোবাংলা স্থানীয় তিনটি গ্যাস উত্তোলন কোম্পানির আওতায় মোট ৪৮টি কূপ খনন করবে। এর মধ্যে বাপেক্সের আওতায় ২০টি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) আওতায় ১৩ ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতায় ১৫টি কূপ। এগুলোর মধ্যে আবার ১৭টি করে অনুসন্ধান ও মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ এবং ওয়ার্কওভার হবে ১৬টির। এগুলো খননের মাধ্যমে তিন কোম্পানির আওতায় যথাক্রমে দৈনিক ২৮১, ১৫২ ও ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার কথা।
পেট্রোবাংলার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে ১১টির আর ওয়ার্কওভার কার্যক্রম চলমান রয়েছে তিনটি কূপের। কাজ শেষ হওয়া কূপগুলো থেকে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সম্ভাব্য উৎপাদন নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কেবল পাঁচটি কূপের গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তাতে নতুন করে দিনে ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বাড়তি জোগান বেড়েছে। বাকি ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্রিডে যুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যক্রম চলমান। আর সে কাজ শেষ হতে চলতি বছর শেষ নাগাদ লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে কোম্পানিগুলো।
গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে তিন ধরনের প্রাক্কলন করেছে পেট্রোবাংলা। তাতে গ্যাসের সার্বিক পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে প্রথম ধাপে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার ৭৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে যথাক্রমে ৩ হাজার ৮৮৩ ও ২ হাজার ৭৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট ধরা হয়েছে। এর বিপরীতে সরবরাহ রয়েছে মোট ৩ হাজার ২৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয় সরবরাহ ২ হাজার ১৭৯ ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪ হাজার ৯৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট (সিনারিও-১), দ্বিতীয় গ্যাস চাহিদা পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ৯৬৫ মিলিয়ন ও তৃতীয় পরিস্থিতিতে ২ হাজার ৪৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এ সময় পেট্রোবাংলা দৈনিক গ্যাস সরবরাহ প্রাক্কলন করেছে ৩ হাজার ৪০৭ মিলিয়ন ঘনফুট, যার মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে আসবে ২ হাজার ৪২৭ মিলিয়ন ও এলএনজি সরবরাহ হবে ৯৮০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ দেশে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকবে অন্তত দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি ২০২৬ সাল পর্যন্ত থাকবে বলেও স্বীকার করেছে সংস্থাটি। তবে এলএনজি আমদানির যেসব চুক্তি করা হয়েছে তার আওতায় ২০২৬ সাল নাগাদ সেগুলো আসবে। তখন এসব ঘাটতি কিছুটা দূর হবে। যদিও সরবরাহ বাড়াতে স্থানীয় পার্যায়েই গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে চায় পেট্রোবাংলা।
এ বিষয়ে গতকালের সেমিনারে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি হচ্ছে গ্যাস। আমাদের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতির কারণে সমালোচনা হচ্ছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করতে প্রস্তুত হয়েছি। সেই সঙ্গে চলমান ৪৮টির পাশাপাশি আরো ১০০টি কূপ খনন করা হবে ২০২৮ সালের মধ্যে।’ এসব কূপের বেশির ভাগই ভোলা, নোয়াখালী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে খনন করা হবে বলে জানা গেছে।
দেশে গ্যাসের সবচেয়ে বেশি চাহিদা বিদ্যুৎ খাতে। অথচ সেখানেই চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর সবটুকু পূরণ করা গেলে বিদ্যুৎ খাতে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পেট্রোবাংলার কর্মশালায় তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমাদের গ্যাসের চাহিদা দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু আমরা দিতে পারি কেবল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুতে যদি চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দেয়া যেত, তাহলে এ খাতে ভর্তুকি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে আসত।’
