ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৪ অক্টোবর, ২০২৩ | ১০:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বেড়েছে ওষুধের দাম
১৪ অক্টোবর, ২০২৩ | ১০:৩৭ পিএম
বেড়ে চলেছে ওষুধের দাম। দুই বছর আগে করোনার সময় যেভাবে বেড়েছিল ওষুধের দাম তা আর কমেনি। বর্তমানে ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণেও অব্যাহত রয়েছে ওষুধের ঊর্ধ্বমুখী মূল্য। বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা, সেকলো, অমিডন, মন্টিয়ার-মোনাস, এমকাস, রিভার্সএয়ারের মতো ওষুধগুলোর দাম বেড়েছে কারণ ছাড়াই। ২০ টাকার নাপা সিরাপ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। ৪৫ টাকার সেকলো কিনতে দিতে হচ্ছে ৬০ টাকা। এদিকে আমদানি করলেও এখনো কমেনি ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্যালাইনের (আইভ ফ্লুইড) দামও। ব্যবসায়ীরা গত বছরও যেমন ডলারের দাম বৃদ্ধিকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করেছিলেন এখনো তাই করছেন।
কিন্তু দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে দিনশেষে ডলারের উচ্চমূল্যকেই দুষলেন ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান। তিনি বলেন, ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য বছরের শুরুতে এলসি খুলেছিলাম তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা। যখন শিপমেন্ট এসে পৌঁছাচ্ছে, তখন ডলারের দাম উঠেছে ১১০ টাকায়। প্রতি ডলারে ৩০ টাকা করে বেশি দিতে হচ্ছে। প্রাইস পলিসি মোতাবেক প্রত্যেক বছরের বাজারের আর্থিক অবস্থা যাচাই করে এমআরপি পণ্যের দাম নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু ২০ বছরেও তা করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামও চড়া। এখন কিছু ওষুধের দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা মুশকিল। আমরাও আসলে অসহায়।
স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, দেশের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে রয়েছে। আর এই ক্ষমতাবলে গত বছরের ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় ওষুধের পুনর্নির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। ওই সময় জরুরি ৫৩টি ওষুধের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
এর মধ্যে প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের দাম ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ২০ পয়সা, প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেটের (র্যাপিড) দাম ৭০ পয়সা থেকে করা হয় ১ টাকা ৩০ পয়সা, প্যারাসিটামল ৬৫০ এমজি ট্যাবলেটের (এক্সআর) দাম ১ টাকা ৩১ পয়সা থেকে করা হয় ২ টাকা, প্যারাসিটামল ১০০০ এমজি ট্যাবলেটের দাম করা হয়েছে ২ টাকা ২৫ পয়সা যা আগে ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা, একইভাবে প্যারাসিটামল ৮০ এমজি ড্রাপস ১৫ এমএল বোতলের দাম করা হয় ২০ টাকা যা আগে বিক্রি হতো ১২ টাকা ৮৮ পয়সায়,
মেট্রোনিডাজল ২০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ৬০ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা, মেট্রোনিডাজল ২৫০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ৯২ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা ২৫ পয়সা, মেট্রোনিডাজল ৪০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ১ টাকা ৩৭ পয়সা, বর্তমান মূল্য ১ টাকা ৭০ পয়সা, মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড আগের মূল্য ১ টাকা ৬৬ পয়সা, বর্তমান মূল্য ২ টাকা, মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ৬০ এমএল বোতলের আগের মূল্য ২৬ টাকা, বর্তমান মূল্য ৩৫ টাকা, মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতলের আগের মূল্য ৩৪ টাকা ৯২ পয়সা, বর্তমান মূূল্য ৪৫ টাকা।
সরকার নির্ধারিত এসব মূল্য বাজারে ফেলেছে পুরোপুরি নেতিবাচক প্রভাব। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দুই মাস যাবত মায়ের কিডনি চিকিৎসা করাচ্ছেন আব্দুল হামিদ। চিকিৎসকদের পরামর্শে নিয়মিত কিছু ওষুধ কেনেন হাসপাতালের সামনের স্টার ফার্মেসি থেকে। গত জুন থেকে ওষুধের দাম সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সব ওষুধই কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এমনিতেই মায়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ যোগাড় করাই কষ্টকর। এর ওপর ওষুধের প্রায় দ্বিগুণ দাম মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গাইনি জটিলতায় ভোগা রোগীর স্বামী মাহবুব হোসেন বলেন, আমার স্ত্রীর জরায়ুর টিউমারের অপারেশন করাতে হবে। ভর্তি হওয়ার পরই চিকিৎসক আইভি ফ্লুইড স্যালাইন দেয়ার জন্য প্রেসক্রিপশন করেছেন। কিন্তু আশপাশের কোনো হাসপাতালে এক ব্যাগ স্যালাইনও পাইনি। পরে মগবাজার থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে আনিয়েছি ৩ ব্যাগ। এগুলো শেষ হলে কি করব কে জানে!
জানা যায়, এখনো রাজধানীতে চাহিদার ৫০ শতাংশ স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছে কোম্পানিগুলো। আর রাজধানীর বাইরে চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ স্যালাইন সরবরাহ হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্যালাইন আমদানি শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৭ লাখ ব্যাগই আসবে।
তবে ওষুধ প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৭টি ওষুধ কোম্পানির মধ্যে ৬টি কোম্পানি এখন সপ্তাহের সাত দিনই তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদনে রয়েছে। এসব কোম্পানি দিনে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করছে। এ ছাড়া আমদানি করা ব্যাগও দেশে আসছে।
সবমিলিয়ে দ্রুতই আইভি ফ্লুইডের চাহিদা পূরণ হবে বলে দাবি করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর থেকেই আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের যে ৭টি প্রতিষ্ঠান আইভি ফ্লুইড তৈরি করে, তাদের সঙ্গে আমরা বসেছি। এসব কোম্পানি প্রথমে কেউ দিনে এক শিফট; অর্থাৎ, ৮ ঘণ্টা স্যালাইন উৎপাদন করত। তাদের আমরা তিন শিফট; অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছি। তাছাড়া তাদের শুক্রবারে একদিন ‘ডে অফ’ ছিল, সেটিও আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। তারা এখন সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা উৎপাদনে রয়েছে। তাই অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ