ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:১৮:৩১ পিএম

অশান্ত পাহাড়ে ‘নেই’ পর্যটক, ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ

৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ২:২৭ পিএম

অশান্ত পাহাড়ে ‘নেই’ পর্যটক, ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ

ছবি: সংগ্রহীত

সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত। এখানে সারাবছর পর্যটকে মুখরিত থাকলেও চিরচেনা সেই দৃশ্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তার রেশ এখনও কাটেনি। উত্তেজনা কিছুটা ‘কমে’ এলেও এক ধরনের চাপা আতঙ্ক আর ভয় ঘিরে আছে পাহাড়ে; যার প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতেও। ১৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে খাগড়াছড়িতে পর্যটক আসেনি। শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে তিনদিনের ছুটি থাকলেও হোটেল-মোটেলগুলোতে বুকিং নেই। পর্যটক না থাকায় রুমগুলো ‘ফাঁকা’ পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকবাহী জিপ গাড়ির চালকরা।

রেস্তোরাঁগুলোতে নেই বেচা-বিক্রি। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন এলাকা ভ্রমণে দর্শনার্থীদের নিরুৎসাহিত করার পর আগাম বুকিংও বাতিল করেছেন অনেক পর্যটক। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোটেল মালিকদের দৈনিক ক্ষতি অন্তত ২৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ। সবমিলিয়ে গত দুই সপ্তাহে ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পর্যটন খাতে অচলাবস্থা কাটার সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “পাহাড়ে সহিংসতার পর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো পর্যটক আসেনি। সামনে সাপ্তাহিক আর পূজার ছুটি মিলিয়ে তিন দিনের বন্ধ ছিল। এ সময় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকে মুখর থাকার কথা ছিল।

“অথচ আমাদের হোটেলসহ অন্যান্য আবাসিক হোটেলে কোনো কক্ষ বরাদ্দ হয়নি। অর্থাৎ এই অবস্থায় কোনো পর্যটক আসবে না।”

তিনি বলেন, “খাগড়াছড়ি পর্যটন শিল্প অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত। এখানে পর্যটনের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক, কৃষিখাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে পাহাড়ে উৎপাদিত ফলসহ কৃষি পণ্যের চাহিদাও বাড়ে। অথচ এখন বিপরীত চিত্র।”

‘গাইরিং’ নামের একটি হোটেলের স্বত্বাধিকারীও বিকাশ। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে আবাসিক হোটেলের সংখ্যা প্রায় ৩৫। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল সমিতির অন্তর্ভুক্ত ২৫টি রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তার ভাষ্য, “পর্যটক না থাকায় হোটেল মালিকদের দৈনিক ক্ষতি অন্তত ২৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এরইমধ্যে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা কোকোনাথ ত্রিপুরা বলছিলেন, “স্বাভাবিক সময়ে আলুটিলায় ৫০০ থেকে ৬০০ দর্শনার্থী আসে। ছুটির দিনে প্রায় এক হাজারের বেশি দর্শনার্থী আছে। অথচ এখন কেউ নেই।”

পর্যটন কেন্দ্রটির গেটম্যান রতন ত্রিপুরা বলেন, “সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে তার প্রভাব এখানেও পড়েছে। সরকারি রাজ্স্ব আদায় প্রায় শূন্যের কোটায়"

আলুটিলা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মো. মামুন বলেন, “আমাদের বেহাল অবস্থা। কোনো পর্যটক নেই। সামনে পূজার বন্ধ। টানা তিন দিনের বন্ধ ছিল। কিন্ত এখন যা অস্থিরতা সেটা না কাটলে পর্যটক সমাগম হবে বলে মনে হয় না। আমাদের প্রতিদিনই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।"

এদিকে সাজেকে পর্যটন কেন্দ্রের পরিস্থিতি আরও নাজুক। ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সেখানেও কোনো পর্যটক ভ্রমণ করেনি। সাজেকে ১২০টি হোটেল, রির্সোট ও কটেজ রয়েছে। এছাড়ার ৪০টির বেশি রেস্তোরাঁ থাকলেও নেই কোনো বিক্রি। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সাজেকের ব্যবসায়ীরা।

পূজার ছুটি উপলক্ষে পাওয়া অগ্রীম বুকিংয়ের টাকা রিফান্ড করতে হচ্ছে বলে জানালেন ‘মেঘপল্লী রির্সোটের’ স্বত্বাধিকারী শাহ আলম। তিনি বলেন, “আমাদের কটেজে ছুটির দিন ছাড়াও রুম বুকিং থাকত। দুই সপ্তাহে আমাদের ক্ষতি প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। পূজার ছুটিতে দিনে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যটক সাজেক ভ্রমণ করতো। কয়েক দিনে সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে কয়েক কোটি টাকা আয় হতো।

“অথচ দেখেন, এখন অনেক পর্যটক বুকিং বাতিল করছে। তাদের বুকিং মানিও ফেরত দিতে হচ্ছে।”

অশান্ত পাহাড়ে ‘নেই’ পর্যটক, ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ