ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:৪২:৪৪ এএম

আ. লীগ আমলের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ : অর্থ উপদেষ্টা

৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:২৪ এএম

আ. লীগ আমলের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে অতীতের নীতিগত ভুল সিদ্ধান্ত এবং দুর্নীতির প্রভাব মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অতীতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে যে ভুল নীতি ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তার খেসারত এখন দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে।

 

আজ রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ‘সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: প্রবণতা, মূল চ্যালেঞ্জ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

 

ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, "অতীতের দুর্নীতি এবং ভুল নীতির কারণে বাংলাদেশ অনেক বড় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন সৌদি আরবের আরামকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং, তাদের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনার সুযোগ হারিয়েছে। স্যামসাং একসময় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের উপযুক্ত গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ার কারণে তারা ভিয়েতনামে চলে যায়।"

 

 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "এই নীতিগত ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ এখন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এসব ভুল সংশোধন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।"

 


ড. সালেহউদ্দিন আরো জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে কিছু উন্নতি হলেও তহবিল সংগ্রহ এবং তার সঠিক ব্যবহারের মধ্যে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সম্প্রতি ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল পেয়েছে এবং শিগগিরই আরও ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার আশা রয়েছে। তবে মূল চ্যালেঞ্জ হলো এই তহবিলের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং পরিশোধ নিশ্চিত করা।"

 


ড. সালেহউদ্দিন শেয়ারবাজারের সমালোচনা করে বলেন, "কিছু কম্পানির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের শেয়ারের দাম বাড়ছে, যা বাজারের সচ্ছতার অভাবকেই ইঙ্গিত দেয়। বাজারের সচ্ছতা নিশ্চিত করতে এসব অসংগতিগুলোর অবশ্যই সমাধান করতে হবে।"

 


বাংলাদেশের সৌদি আরবের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বিনিয়োগের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, "সৌদি আরব আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং এর আরো প্রবৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।" তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।

 


পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আরো অনেক কিছু করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "দেশের দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রশিক্ষণের মান উন্নত করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু আমরা প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারছি না।"

 

তিনি আরও বলেন, "বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশকে ব্যবসায়িক পরিবেশ সহজতর করতে কাজ করতে হবে।"

 


সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান বলেন, "বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানি আরামকো বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপন করতে আগ্রহী। যদি চট্টগ্রাম এবং দাম্মামের মধ্যে একটি সামুদ্রিক রুট স্থাপিত হয়, তবে এটি বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে পারে।"

 

 

তিনি আরও বলেন, "আমাদের কিছু সফল প্রকল্প রয়েছে, যেমন রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল এবং পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিচালনা করছে। এছাড়া, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরেও কাজ করতে আগ্রহী।"

 


অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একযোগ প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ উন্নত করতে হবে এবং নীতিগত ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে, যাতে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী এবং উন্নত হতে পারে।

আ. লীগ আমলের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ : অর্থ উপদেষ্টা