ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৫১:০২ পিএম

আগামী বছর বিশ্বব্যাপী একীভূতকরণ-অধিগ্রহণ ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে

২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭:৩০ পিএম

আগামী বছর বিশ্বব্যাপী একীভূতকরণ-অধিগ্রহণ ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে

ছবি: সংগ্রহ

বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের (এমঅ্যান্ডএ) পরিমাণ আগামী বছর ৪ ট্রিলিয়ন (প্রতি ট্রিলিয়নে ১ লাখ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শীর্ষ এমঅ্যান্ডএ চুক্তি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ-সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ বিধিতে শিথিলতা আনতে পারেন। তাছাড়া করপোরেট করও কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এমন অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক একীভূতকরণ-অধিগ্রহণ নিয়ে প্রত্যাশা বাড়ছে।

 

তবে নানাবিধ অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী একীভূতকরণ-অধিগ্রহণে চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক আইন সংস্থা কির্কল্যান্ড অ্যান্ড এলিসের এমঅ্যান্ডএ পার্টনার ড্যানিয়েল উলফ বলেন, ‘‌সাম্প্রতিক সময়ে সুদহার কমার গতি ধীর হয়েছে। মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির জটিলতার কারণে এ বিষয়ে সহজে পূর্বানুমান করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধের কারণেও অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি রাতারাতি পরিবর্তন হচ্ছে, যা অধিগ্রহণ-একীভূতকরণে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ফলে কোম্পানিগুলোকে এর ধাক্কা সামলাতে প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে।


তবে ট্রাম্পের আমলে এক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে বলে প্রত্যাশা উত্তর আমেরিকায় জেপি মরগানের এমঅ্যান্ডএ বিভাগের সহপ্রধান জে হফম্যানের। তিনি বলেন, ‘‌ট্রাম্পের অধীনে অ্যান্টিট্রাস্ট (একচেটিয়া প্রতিযোগিতাবিরোধী) কার্যক্রম অবশ্যই বাইডেন প্রশাসনের চেয়ে বেশি সহায়ক হবে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রক বাধা সরিয়ে ব্যবসাগুলোকে মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা ও মনোভাব সম্ভবত আগামী বছর এমঅ্যান্ডএর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। করপোরেট বা ব্যক্তিগত কর কাঠামো আরো কঠোর হওয়ার সম্ভাবনাও কম। এ দুটি বিষয় অর্থনীতি ও এমঅ্যান্ডএ চুক্তির ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।’

 

ব্রিটিশ বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান বার্কলেসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের বিভিন্ন প্রান্তিকে বিশ্বের নানা অঞ্চলে একীভূতকরণ-অধিগ্রহণের মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। প্রথম প্রান্তিকে উত্তর আমেরিকায় ১ হাজার কোটির বেশি ডলারের বেশ কয়েকটি ট্রান্সফরমেশনাল চুক্তি স্বাক্ষর হয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরোপে চুক্তির পরিমাণ, বিশেষ করে ১ হাজার কোটি ডলারের নিচে চুক্তি বাড়ে। তবে কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে তৃতীয় প্রান্তিকে জাপানসহ এশিয়া-প্যাসিফিকের অন্য দেশগুলোয় অধিগ্রহণ-একীভূতকরণের ঘটনা বাড়তে দেখা গেছে। চতুর্থ প্রান্তিকে প্রাইভেট ইকুইটি প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কিনে সেগুলো বেসরকারীকরণ (টেক-প্রাইভেট চুক্তি) করেছে।

 

চলতি বছর বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে সংঘটিত রাজনৈতিক পরিবর্তন অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলেছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুদহার ধীরে ধীরে কমে আসছে। এতে অধিগ্রহণ-একীভূতকরণ আরো উৎসাহিত হচ্ছে।

 

ডয়চে ব্যাংকের গ্লোবাল এমঅ্যান্ডএ বিভাগের প্রধান অ্যালিসন হার্ডিং-জোনস বলেন, ‘‌আগামী বছর সম্ভাব্য উচ্চ শুল্কের প্রভাব মোকাবেলা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বড় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো অধিগ্রহণ বা একীভূতকরণ করতে পারে। একই ঘটনা বিপরীতভাবেও ঘটতে পারে।’

 

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক কিছু নির্দিষ্ট খাত যেমন ইস্পাত, সৌরবিদ্যুৎ শিল্পকে বেশি প্রভাবিত করতে পারে। ফলে এসব খাতের কোম্পানিগুলো আগামী বছর অধিগ্রহণ-একীভূতকরণ করতে পারে। তবে এটি কী পরিমাণ ঘটবে সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বিশ্লেষকরা।

 

এদিকে পাবলিক কোম্পানিগুলোর বেসরকারীকরণ আগামী বছর এশিয়া অঞ্চলের একীভূতকরণ-অধিগ্রহণের প্রধান প্রবণতা হবে বলে ধারণা করছেন ইউবিএসের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের এমঅ্যান্ডএ বিভাগের সহপ্রধান স্যামসন লো। তিনি বলেন, ‘‌অর্থনৈতিক প্রণোদনার ব্যাপারে চীন স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে কোম্পানিগুলোর আস্থা ফেরায় অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে। আগামী দিনগুলোয় আন্তঃসীমান্ত লেনদেনও বাড়বে। এ অবস্থায় টেক-প্রাইভেট চুক্তি জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে হংকং, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে এ ধরনের অধিগ্রহণ বাড়ছে এবং এটি আগামী বছরের প্রধান প্রবণতায় পরিণত হবে।’

 

মরগান স্ট্যানলির গ্লোবাল এমঅ্যান্ডএর সহপ্রধান জন কলিন্স বলেন, ‘‌অধিগ্রহণ-একীভূতকরণ বাড়বে বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কিছুটা সতর্ক মনোভাব বজায় রাখা হয়। তবে এখন আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছি। যদিও কী পরিমাণ প্রবৃদ্ধি হবে সে বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে। বিশেষ করে ভূরাজনীতি কীভাবে আন্তঃসীমান্ত অধিগ্রহণ-একীভূতকরণে প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে, তা যুক্তরাষ্ট্রেই হোক, কিংবা বাইরে।’

আগামী বছর বিশ্বব্যাপী একীভূতকরণ-অধিগ্রহণ ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে