ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:২৮:৩১ পিএম

আটকে রাখা তিন কার্গো, বাণিজ্যে ‘ভাগ’ চায় আরাকান আর্মি!

২০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:২২ এএম

আটকে রাখা তিন কার্গো, বাণিজ্যে ‘ভাগ’ চায় আরাকান আর্মি!

ছবি: সংগ্রহ

মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ) দীর্ঘদিন ধরে রাখাইন রাজ্যের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি, এই গ্রুপ নাফ নদী এলাকায় মিয়ানমারের জলসীমায় নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার ফলে টেকনাফ কেন্দ্রিক সীমান্ত বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

জানুয়ারি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ টেকনাফ বন্দরে পৌঁছায়নি। এর পাশাপাশি, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা চারটি পণ্যবাহী কার্গো আটক করেছে আরাকান আর্মি। এসব জাহাজ ইয়াংগুন থেকে পণ্য নিয়ে রওনা দিয়েছিল, তবে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশের আগেই আরাকান আর্মি জাহাজের ক্রু ও নাবিকদের জিম্মি করে, মংডুর খায়ুংখালী খালে এসব জাহাজ আটক রাখে। বর্তমানে, দুটি জাহাজ বৃহস্পতিবার থেকে এবং বাকি দুটি শুক্রবার থেকে সেখানে আটকে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন, কারণ তারা জানেন না কবে নাগাদ এসব জাহাজ ছাড়বে।

 

 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এসব জাহাজের মালিক মিয়ানমারের হলেও পণ্যগুলো বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, আরাকান আর্মি হয়তো কমিশন আদায় করতে চাইছে, তাই পণ্যবাহী জাহাজ আটকে রাখা হয়েছে। ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, "আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না কেন এসব জাহাজ আটকে রাখা হয়েছে, তবে এটি নিশ্চিত যে, ব্যবসায়ীরা এখন আতঙ্কিত।"

 

 

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আরাকান আর্মি তাদের জলসীমার মধ্যে পণ্যবাহী কার্গো চলাচলে কমিশন দাবি করছে, যার কারণে তারা এসব জাহাজ আটকে রেখেছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, এভাবে কমিশন আদায় করার উদ্যোগ বাণিজ্যিকভাবে খুবই ক্ষতিকর এবং একে চলমান সংঘাতের অংশ হিসেবেই দেখছেন তারা।

 

 

এদিকে, টেকনাফ বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য করে আসলেও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হননি। ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, "এ পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসা চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ১০ শতাংশ কমিশন চাওয়ার খবর শুনেছি।"

 

 

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, এসব কার্গো যেহেতু এখনও আটকে আছে, তাই দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, সীমান্ত বাণিজ্য সচল রাখতে সরকারের সঙ্গে মিয়ানমারের আলোচনায় দ্রুত ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

 

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আরাকান আর্মি সীমান্ত বাণিজ্যের ভাগ নিতে চায়, এবং তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত বাণিজ্যে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, "যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা সমাধান করতে হবে, না হলে সীমান্ত বাণিজ্যে বিরাট ক্ষতি হতে পারে।"

 

 

এদিকে, বিজিবি এবং স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে এবং বিষয়টির সুরাহা নিয়ে কাজ করছে। তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অনেকেই টেকনাফ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে।

আটকে রাখা তিন কার্গো, বাণিজ্যে ‘ভাগ’ চায় আরাকান আর্মি!