ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৪৫:০৮ এএম

আদানির বিদ্যুতে ৪৮০০ কোটি শুল্ক ফাঁকি

১৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৭ এএম

আদানির বিদ্যুতে ৪৮০০ কোটি শুল্ক ফাঁকি

ছবি: সংগ্রহীত

ভারতের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের করা বিদ্যুৎ চুক্তির কারণে এখন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ আমদানিতে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ, শুল্ক ফাঁকি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে করা এই বিদ্যুৎ চুক্তির বিরোধিতায় সাধারণ জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ থাকলেও তা অবশেষে প্রকাশ্যে আসে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে।

 

 

তদন্তে জানা যায়, আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পুরো প্রক্রিয়াতেই রয়েছে নানা অনিয়ম। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশে বিল অব এন্ট্রি দাখিল বাধ্যতামূলক হলেও আদানি গ্রুপের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। রহনপুর কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবেশের অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়, যা কাস্টমস আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ অবস্থায় পিডিবির ওপর প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির দায় চাপানো হয়েছে।

 

 

শুধু শুল্ক ফাঁকি নয়, বিদ্যুৎ আমদানির শর্তেও রয়েছে বিপুল অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ। কাস্টমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আদানি গ্রুপ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪২ ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। আমদানিকৃত এই বিদ্যুতের জন্য প্রযোজ্য ৫ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং ৫ শতাংশ আগাম করসহ মোট ৩১ শতাংশ করভারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে।

 

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আদানি গ্রুপের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের করা অসম এই চুক্তির শর্ত যাচাই-বাছাই করতে কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আট সদস্যের এই কমিটির দায়িত্ব ছিল বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিটি খরচ ও শর্তাবলি যাচাই-বাছাই করা। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে আদানি বিদ্যুৎ আমদানির জন্য যে কাস্টমস স্টেশন ব্যবহার করা হয়েছে, তা কাস্টমস আইন অনুযায়ী অনুমোদিত নয় এবং এই প্রক্রিয়ায় বৈধভাবে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি।

 

 

এ প্রসঙ্গে পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বাস্তবায়ন চুক্তির শর্তানুযায়ী, সরকার থেকে শুল্ক-কর মওকুফের সুবিধা চেয়ে আবেদন করা হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কোনো অব্যাহতি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এর ফলে আদানি গ্রুপের আমদানিকৃত বিদ্যুতের জন্য শুল্ক-কর পরিশোধযোগ্য থাকে। তবে এনবিআরের কোনো শুল্ক ছাড় না দেওয়া এবং বিল অব এন্ট্রি দাখিলের নিয়ম না মেনে আমদানি প্রক্রিয়া চালানো একটি গুরুতর অনিয়ম হিসেবে দেখা দিয়েছে।

 

 

বিশ্লেষকদের মতে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে বিপুল অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়তে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২৫ বছরে আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশকে প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই চুক্তির ফলে বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য ছাড়াও শুল্ক ফাঁকি ও অতিরিক্ত চার্জের কারণে দেশের সাধারণ জনগণের ওপর আরও বাড়তি চাপ আসবে।

 

 

এ অবস্থায় কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, “আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তিটি ছিল বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। এতে আদানি গ্রুপের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়নি। এ চুক্তির শর্তগুলো কেমন ছিল, তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি।”

 

 

বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এই চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনা করে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আদানির বিদ্যুতে ৪৮০০ কোটি শুল্ক ফাঁকি