ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:১৪:২০ পিএম

আদানির বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, পর্যালোচনার দাবি বাংলাদেশের

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৪:১৭ পিএম

আদানির বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, পর্যালোচনার দাবি বাংলাদেশের

ছবি: সংগ্রহ

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অভিযোগ অনুযায়ী, ভারতের সরকার থেকে কর সুবিধা পেলেও আদানি চুক্তি অনুযায়ী সেই সুবিধা বাংলাদেশকে জানায়নি বা ভাগাভাগি করেনি।

 

২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি এবং বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, কর সুবিধার যেকোনো পরিবর্তন দ্রুত বাংলাদেশকে জানানো এবং সেই সুবিধা ভাগাভাগি করার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে নথি অনুসারে আদানি এই শর্ত মানেনি।

 


ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির নিয়ন্ত্রণাধীন আদানি পাওয়ার পূর্ব ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের মেয়াদি চুক্তি করে।

 

চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কর অব্যাহতির সুবিধা পেয়েছিল। বিপিডিবির পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশকে সেই সুবিধা দিতে অনুরোধ করা হলেও আদানি কোনো জবাব দেয়নি।

 

নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহে কর সুবিধা ভাগাভাগি হলে বাংলাদেশ প্রায় ২৮.৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারত।

 


তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেন্ডার ছাড়া এই চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেন্ডার ছাড়া চুক্তি করা অস্বাভাবিক এবং এতে ব্যয় কমানোর সুযোগ নষ্ট হয়েছে।

 

এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার থিঙ্কট্যাঙ্ক ক্লাইমেট এনার্জি ফাইন্যান্স-এর পরিচালক টিম বাকলে বলেন, "টেন্ডারের মাধ্যমে সম্ভাব্য সেরা মূল্য নিশ্চিত করা যায়।"

 


পাওনা পরিশোধ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আদানি পাওয়ার দাবি করছে, বাংলাদেশ তাদের ৯০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেনি। বিপিডিবি বলছে, এই পাওনার পরিমাণ ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।

 

চলতি বছরের অক্টোবরে আদানি পাওয়ার তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনায় বাংলাদেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের স্থানীয় উৎপাদনই বিদ্যুৎ

 

নভেম্বরে আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলা হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার ২৫ বছরের মেয়াদি এই চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলও গঠন করা হয়েছে।

 

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, "ঘুষ বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী চুক্তি বাতিলের মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।"

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি উল্লেখ করেছে যে, আদানির চুক্তি যাচাই করা উচিত।

 


রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে আদানি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা সব চুক্তিগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে এবং চুক্তি পর্যালোচনা হচ্ছে এমন কোনো তথ্য তাদের জানা নেই। তবে এ বিষয়ে ভারতের মোদি প্রশাসন কিংবা শেখ হাসিনার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

 


বাংলাদেশ সরকার আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক নীতির অনুসরণে গুরুত্ব দিচ্ছে। চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন এবং পাওনা পরিশোধের ইস্যুতে দুই পক্ষ শিগগিরই আলোচনায় বসবে বলে জানা গেছে।

আদানির বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, পর্যালোচনার দাবি বাংলাদেশের