ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ইসরাইলের জাতিগত নিধনে মদদ দিচ্ছেন ট্রাম্প
২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:৩০ পিএম
![ইসরাইলের জাতিগত নিধনে মদদ দিচ্ছেন ট্রাম্প](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/01/27/20250127143245_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
গাজা উপত্যকা থেকে আরও ফিলিস্তিনি শরণার্থী গ্রহণ করতে মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিকল্পনাকে জাতিগত নিধনে মদদ বলে মনে করছেন অনেকে। এরই মধ্যে ইসরাইলকে ২০০০ পাউন্ডের বোমা দিতেও সম্মত হয়েছেন তিনি। কার্যত বাইডেন আমলে ইসরাইলের শুরু করা জাতিগত নিধনযন্ত্র চালু রাখার পথটাই পরিষ্কার করছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শনিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, এ বিষয়ে দিনের শুরুতে তিনি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। পরে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও কথা বলবেন। ট্রাম্প বলেন, আমি চাই মিসর লোকজনকে (গাজার) নিয়ে যাক। আমরা সম্ভবত এখানে ১৫ লাখ মানুষ নিয়ে কথা বলছি। আসুন আমরা ওই পুরো জায়গাটি পরিষ্কার-সাফ করে ফেলি। আপনি জানেন, এটি (গাজা) শেষ হয়ে গেছে।
ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সফলভাবে গ্রহণ করায় তিনি জর্ডানের প্রশংসা করেন এবং বাদশাহকে বলেন, আমি চাই আপনি আরও দায়িত্ব গ্রহণ করুন, কারণ আমি এখন পুরো গাজা স্ট্রিপের দিকে তাকিয়ে আছি এবং এটি একটি জগাখিচুড়ি। এটা সত্যিকারের জগাখিচুড়ি।
গাজায় ইসরাইলের গণহত্যায় গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, গাজার বাসিন্দাদের ‘সাময়িকভাবে বা দীর্ঘমেয়াদি’ স্থানান্তর করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এটি এখন আক্ষরিক অর্থেই একটি ধ্বংসাত্মক স্থান, প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেখানে মানুষ মারা যাচ্ছে। সুতরাং আমি বরং কিছু আরব দেশের সঙ্গে জড়িত হতে চাই এবং একটি ভিন্ন স্থানে আবাসন তৈরি করতে চাই। যেখানে তারা (গাজার বাসিন্দারা) পরিবর্তনের জন্য শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
এ বিষয়ে কাতারের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল-আরিয়ান বলেন, ইসরাইলি কর্মকর্তারা ‘যুদ্ধের খুব শুরুতে’ ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে যতটা সম্ভব ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনাটি একাধিক কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। যার মধ্যে একটি হলো-আরব নেতারা সেই সময়ে অতিরিক্ত ফিলিস্তিনি শরণার্থী জনসংখ্যা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।
স্ট্র্যাটেজিজ অব প্যালেস্টানিয়ান ইউমেন ইন ইসরাইল’ নামের একটি বই লিখেছেন আর. এ. কানানেহ। তিনি সেই বইতে বলেন, ফিলিস্তিনি নারীদের জরায়ুকে হুমকি হিসেবে প্রচার করে ইসরাইল। কেননা জায়নিস্ট রাষ্ট্রবাসনা আর সব জাতিসত্তাকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। ফিলিস্তিনিদের জন্ম রুখতে চায়। ২০১৪ সালে ইসরাইলি আইনপ্রণেতা এয়িলেট শ্যাকেড সমগ্র ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে শত্রু ঘোষণা দিয়ে নারীদের হত্যার ডাক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন। তার সেই পোস্ট হাজার হাজার লাইক কুড়িয়েছিল।
তিনি বলেছিলেন, ওই নারীদের হত্যা করতে হবে কেননা তারা ‘সাপের বাচ্চা’র জন্ম দেয়। নারী অধিকারকর্মী নাদা এলিয়ার ২০১৪ সালে লেখা ‘এন্ডিং জায়নিজম ইজ অ্যা ফেমিনিস্ট ইস্যু’ নামের নিবন্ধে শ্যাকেডের ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলেছেন। বলেছেন, পানি ও জরুরি ওষুধের সরবরাহ বন্ধ রেখে ব্যাপক গর্ভপাত ঘটানো, হাসপাতালের পথে থাকা ফিলিস্তিনি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চেক পয়েন্টে বহু সময় ধরে অপেক্ষা করানো এবং ফিলিস্তিনকে অমানবিক পরিস্থিতিতে বাস করতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে শিশুহত্যা নিশ্চিত করার যে ইসরাইলি কাঠামো, তারই প্রতিফলন শ্যাকেডের ওই মন্তব্য।
এদিকে উগ্র ডানপন্থি ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গাজার বাসিন্দাদের মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তরের ট্রাম্পের ধারণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্মোট্রিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, আরও ভালো জীবন শুরু করার জন্য তাদের (গাজার বাসিন্দাদের) অন্যান্য জায়গা খুঁজে পেতে সহায়তা করার ধারণাটি দুর্দান্ত। তারা অন্যান্য জায়গায় নতুন এবং ভালো জীবন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। নতুন সমাধানের মাধ্যমে ‘আউট অব দ্য বক্স’ চিন্তাই কেবল শান্তি ও নিরাপত্তার সমাধান আনতে পারে।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল সৃষ্টির সময় ফিলিস্তিনিদের গণ-বাস্তুচ্যুতির স্মৃতিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। মিসর এর আগে গাজা থেকে সিনাই মরুভূমিতে ফিলিস্তিনিদের যে কোনো ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির’ বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল। দেশটির সিসি বলেছিলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ‘১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে মিসরের সই হওয়া শান্তি চুক্তিকে বিপন্ন করতে পারে।’ জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, জর্ডানে এরই মধ্যে প্রায় ২৩ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে।
ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির বিরুদ্ধে ইসরাইলের ১৫ মাসের যুদ্ধে ৪৭ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। যদিও সেখানকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। অবিরাম বোমা হামলা বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ অনুমান করেছে, এই শহর পুনর্গঠনে কয়েক দশক বছর সময় লাগতে পারে। ইসরাইলকে ২০০০ পাউন্ড বোমা দেওয়ার বিষয়টি এতদিন আটকে রেখেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বাইডেনের সেই বাধা উপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার ট্রাম্প নিজেই এমনটি জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরাইলকে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক সহায়তা সরবরাহ করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের (ইউএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলকে ১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ২৯৭ বিলিয়ন ডলার (মুদ্রাস্ফীতির জন্য সমন্বয় করা হয়েছে) সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ২১৬ বিলিয়ন ডলারই ছিল সামরিক সহায়তা এবং ৮১ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা।
![ইসরাইলের জাতিগত নিধনে মদদ দিচ্ছেন ট্রাম্প](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)