ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৩০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কাছাকাছি বিশ্ব
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৩০ এএম
![উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কাছাকাছি বিশ্ব](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/24/20241024083027_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহীত
উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণত বড় ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এ কারণে ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগ হ্রাসের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধীর করে দেয়। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অবনমন ছাড়াই বিশ্বের অনেক দেশই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। খবর এপি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বৈশ্বিক অর্থনীতির সর্বশেষ মূল্যায়নে আইএমএফ পূর্বাভাসে জানিয়েছে, গত বছরের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এ বছর ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। ২০২৫ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিশ্বের অন্য অংশের তুলনায় উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমবে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এসব দেশে গত বছরের ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থেকে এ বছর ২ দশমিক ৬ থেকে ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। ২ শতাংশে নেমে আসা উন্নত অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য অর্জন। কারণ বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য অনুসারে ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য যথেষ্ট।
কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার যখন অনেকটাই গতি লাভ করে তখন স্থবিরতা এনে দেয় মূল্যস্ফীতি। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনে ঘাটতি দেখা যায়, বেড়ে যায় পণ্যমূল্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ অর্থনীতিগুলো একাধিক দফা সুদহার বাড়ালে তা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি আসায় মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ও ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকসহ (ইসিবি) একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুদহার কমিয়ে এনেছে। তবে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসকে পাশ কাটিয়ে, উচ্চ সুদহারের মাঝেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক দেশ অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছিল এবং নিয়োগকর্তারা আরো বেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ে গোরাঁশা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। বেশির ভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে।’
এছাড়া এক ব্লগ পোস্টে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মন্দা ছাড়াই মূল্যস্ফীতির হ্রাস একটি বড় অর্জন।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ১৯০টি দেশের সঙ্গে কাজ করে। দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক দারিদ্র্য হ্রাসকে নিজেদের লক্ষ্য বলে প্রচার করে সংস্থাটি। মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকে ইতিবাচকভাবে সংশোধন করেছে আইএমএফ। অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপ ও চীনের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে।
প্রতিবেদনে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে ২০২৪ সালের জন্য তুলনামূলকভাবে ধীর ৩ দশমিক ২ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে আইএমএফ। পূর্বাভাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিছু অঞ্চল ভালো বা খারাপ পারফর্ম করতে পারে। তবে সামগ্রিক বৈশ্বিক অর্থনীতি ধীর কিন্তু স্থিতিশীল হারে বাড়তে পারে।
আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এ বছর ২ দশমিক ৮ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে, যা ২০২৩ সালের ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে কিছুটা কম। তবে গত জুলাইয়ে দেয়া পূর্বাভাস ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেশি। মূলত শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয়ের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মজুরি বৃদ্ধি মার্কিন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।
২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলায় কমে ২ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। আইএমএফ ধারণা করছে, এ সময় নির্বাচন-পরবর্তী নতুন মার্কিন প্রশাসন সরকারি ব্যয় হ্রাস ও কর বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি রোধের চেষ্টা করবে। এর প্রভাব পড়তে পারে চাকরির বাজারে।
পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৩ সালের ৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে এবার চীনের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মূলত আবাসন বাজারের পতন ও দুর্বল ভোক্তা আস্থার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
এ বছর ইউরোজোন দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, যা ২০২৩ সালের দশমিক ৪ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ। যদিও তিন মাসের আগে বলা হয়েছিল, এ বছর ইউরোজোনে দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী সুদহার কমতে থাকায় দেশগুলোর অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির জন্য গতি পাচ্ছে। আইএমএফ সতর্ক করে বলছে, সরকারগুলোর বড় ধরনের বাজেট ঘাটতি এতে আশঙ্কা তৈরি করছে। পূর্বাভাস অনুসারে, সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৪ ও ২০২৫ সাল দুই বছরে ৩ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে, যা গত বছরের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কম। অন্যদিকে ২০০০-১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
ভূরাজনৈতিক সংকট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বৈরিতাসহ ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব বাণিজ্যের গতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য এ বছর ৩ দশমিক ১ ও ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়তে পারে।
পিয়ের-অলিভিয়ে গোরাঁশা আরো জানান, দেশগুলো অভিবাসন কমাতে পদক্ষেপ নিলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল হতে পারে। অথচ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য উন্নত অর্থনীতিতে শ্রমের ঘাটতি কমাতে সাহায্য করেছে।
![উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কাছাকাছি বিশ্ব](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)