ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ৬৮২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে এশিয়ার বাকি অংশের বাণিজ্য
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:০ পিএম
![উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ৬৮২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে এশিয়ার বাকি অংশের বাণিজ্য](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/17/20241217152458_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
চলতি দশকের শেষ নাগাদ উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের বাণিজ্যিক লেনদেনে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটতে পারে। গবেষণা সংস্থা এশিয়া হাউজ সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে উপসাগরীয়-এশিয়া বাণিজ্য ৬৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। গত বছর অঞ্চল দুটির মধ্যে ৪৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য সংঘটিত হয়।
সংগৃহীত তথ্য বলছে, বাণিজ্য বিস্তৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে থাকবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। অর্থাৎ বাণিজ্য বাড়ার পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক সমীকরণে নতুন প্রবণতা ক্রমে স্পষ্ট হতে থাকবে। একই সময়ে জ্বালানি তেলনির্ভরতা থেকে বৈচিত্র্যময় খাতে উপসাগরীয় অর্থনীতি সম্প্রসারণের গতি বাড়তে পারে।
গত বছর উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। একই সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে অঞ্চলটির বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা বাণিজ্যকে ছাড়িয়ে যাবে চীন।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে পশ্চিমা অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থকে প্রভাবিত করবে। এমন সময় এ পরিবর্তন ঘটছে যখন জ্বালানি তেলের দামের নিম্নগতির কারণে ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উপসাগর-এশিয়া বাণিজ্য ১২ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এশিয়ার দিকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যমুখী অবস্থান চলতি সময়ের অন্যতম মৌলিক ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলোর একটি। উভয় অঞ্চলই পারস্পরিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে সংযুক্ত হয়ে উঠছে।
২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের দামের কারণে দুই অঞ্চলের বাণিজ্যমূল্য কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে উপসাগর-এশিয়া বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেক এখনো হাইড্রোকার্বনের ওপর নির্ভরশীল। এশিয়ার জ্বালানি তেলের আমদানির ৫০ শতাংশ উপসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে।
২০২৩ সালে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) দেশগুলোর বাণিজ্য সম্পর্কে নানা ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। ইউএই-চীন বাণিজ্য ২০২২ সালের ১১ হাজার কোটি থেকে ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে এবং সৌদি আরব-চীন বাণিজ্য ১০ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আবার কিছু বাজার এ নিম্নগতিকে অতিক্রম করেছে। যেমন ওমান ও এশিয়ার উদীয়মান বাজারের মধ্যে বাণিজ্য ৪৫০ কোটি থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ১ হাজার ১১০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
দুই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে হংকং। ২০২২ সালে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের হংকং-উপসাগর বাণিজ্য গত বছর প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে গত বছর ইউএই ও সৌদি আরবে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লির সফর।
উপসাগরীয় দেশগুলোর জ্বালানি তেলবহির্ভূত অর্থনীতি বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। ইউএইর এ ধরনের বৈদেশিক বাণিজ্য ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ৩৮ হাজার ১৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা দেশটির মোট বাণিজ্যের ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে সৌদি আরবের জ্বালানি তেলবহির্ভূত রফতানি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ছিল মোট রফতানির ২৩ শতাংশ, যা এ বছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে উপসাগর ও এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। এ অনুসারে, জ্বালানি তেলের চালান এবং জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৪ সালে বেশির ভাগ উপসাগরীয় দেশের জন্য শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউএই, বাহরাইন ও সৌদি আরবের অর্থনীতি যথাক্রমে ৪, ৩ ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ সম্প্রাসরণ দেখবে।
সাম্প্রতিক সময়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। ২০২৩ সালে সৌদি আরবে গ্রিনফিল্ড প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) ১০ গুণ বেড়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ফলে সৌদি আরবে বৃহত্তম গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন।
অবশ্য অঞ্চলটিতে এখনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে মার্কিন অংশীদারত্ব বেশ বড়। উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান জি৪২-এর সঙ্গে মাইক্রোসফটের ১৫০ কোটি ডলারের চুক্তি। এ চুক্তির মাধ্যমে চীনা প্রযুক্তি থেকে সরে আসে জি৪২।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বজনীন শুল্ক কার্যকরের মতো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে চীনা পণ্যের ওপর সম্ভাব্য উচ্চ শুল্কের ইঙ্গিত রয়েছে, যা উপসাগরীয় দেশগুলোকে এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরো গভীর করতে উৎসাহিত করতে পারে।
এরই মধ্যে এশিয়ায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে একাধিক উপসাগরীয় সার্বভৌম সম্পদ তহবিল। এ খাত থেকে চীন ২০২৩ সালে ২৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, যা আগের বছরের ১০ কোটি ডলার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। গত আগস্টে সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড চীনা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ৫ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
অন্যদিকে ইউএই-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কও শক্তিশালী হয়েছে। ২০২৩ সালে তাদের লেনদেন ৭ হাজার ৫৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, অবশ্য ২০২২ সালের ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তুলনায় সামান্য কম। তবে ২০২২ সালের সিইপিএ চুক্তির মাধ্যমে এ সম্পর্ক জ্বালানি তেল খাতকে ছাড়িয়ে বৈচিত্র্যময় হয়েছে।
![উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ৬৮২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে এশিয়ার বাকি অংশের বাণিজ্য](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)