ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৯ জুলাই, ২০২৪ | ৯:৩২ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ঋণ খেলাপিদের জন্য এবার ‘এক্সিট সুবিধা’
৯ জুলাই, ২০২৪ | ৯:৩২ এএম
![ঋণ খেলাপিদের জন্য এবার ‘এক্সিট সুবিধা’](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/07/09/20240709093247_original_webp.webp)
ঋণ খেলাপিদের জন্য এবার ‘এক্সিট সুবিধা’ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সুবিধা দিতে নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে এখন থেকে মাত্র ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে বিশেষ সুবিধা পাবে খেলাপিরা। সোমবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত সুবিধা দিয়ে একটি নীতিমালা জারি করেছে।
নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ঋণগ্রহীতার ব্যবসা, শিল্প বা প্রকল্প কখনো কখনো বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে বন্ধ হয়ে যায় অথবা লোকসানে পরিচালিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায়ে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে, ঋণ খেলাপি বা বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত হয়ে যায়, যা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির পর্যায়ে পড়ে না। গ্রাহকের এমন আর্থিক অবস্থার কারণে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা না থাকা এমন ঋণ এক্সিটের আওতায় আদায় বা সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এক্সিটের আওতায় ঋণ আদায় বা সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যাংকগুলো এক্সিটের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি বা মানদণ্ড অনুসরণ করছে। তাই এসব সুবিধা দিতে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রয়োজন। এ অবস্থা বিবেচনায় ঋণ আদায়ের মাধ্যমে ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ অব্যাহত রাখতে এবং ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিকৃত ঋণ কমাতে একটি নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নীতিমালায় বলা হয়, এক্সিট প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। এ নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকসমূহ এক্সিট সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হবে। তবে, ব্যাংক তাদের নীতিমালায় নমনীয় কোনো শর্ত যুক্ত করতে পারবে না।
ভবিষ্যতে আদায়ের সম্ভাবনা কম এমন খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অথবা নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে প্রকল্প বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ঋণগ্রহীতা কর্তৃক প্রকল্প বা ব্যবসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত ঋণের এক্সিট সুবিধা প্রদান করা যাবে।
ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদে পরিশোধপূর্বক এক্সিট সুবিধা প্রাপ্তির আবেদন করতে হবে। ঋণগ্রহীতার আবেদন প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংক তা নিষ্পত্তির করবে।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এক্সিট সুবিধা অনুমোদিত হতে হবে। তবে, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের এক্সিট সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পাবে।
বিশেষ নির্দেশনায় যা বলা আছে
এক্সিট সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ঋণের দায় সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত এক্সিটের আগের ঋণের শ্রেণিমান বহাল থাকবে। খেলাপি ঋণগ্রহীতা যথানিয়মে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবেন। নিয়মিত সিআইবিতে রিপোর্ট করতে হবে।এ সুবিধা আওতায় পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন হিসেবে গণ্য হবে না।এক্সিট সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ বা সমন্বয়ের পূর্ব পর্যন্ত কোনো ধরনের নতুন ঋণ সুবিধা পাবে না।এক্সিট সুবিধার আওতায় অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ ২০২৪ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১.১১ শতাংশ। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা এবং তিন মাসে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এক বছর আগে ২০২৩ সালের মার্চে ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ হাজার কোটি টাকা এবং গত ডিসেম্বরে ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
রফতানি খাতে বিকল্প নগদ সহায়তায় নিয়োগ হবে অডিট ফার্ম
এদিকে পণ্য রফতানিতে ৪৩টি খাতের নগদ সহায়তা কমিয়ে কিছুদিন আগে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার বিকল্প নগদ সহায়তা দিতে অডিট ফার্ম নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এই নির্দেশনা অনুসরণ করে ব্যাংকগুলোকে অডিট ফার্ম নিয়োগ দিতে হবে। তবে নিয়োগের পর তিন বছরের বেশি একটি অডিট ফার্ম একই ব্যাংকে নগদ সহায়তা/রফতানি ভর্তুকির কেস নিরীক্ষার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না বলেও নির্দেশনায় জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের নগদ সহায়তা বা রফতানি ভর্তুকির আবেদনপত্র নিরীক্ষার লক্ষ্যে ব্যাংকের হিসাব নিরীক্ষায় নিয়োজিত নিরীক্ষা ফার্মের সমান সংখ্যক নিরীক্ষা ফার্ম নিয়োগ করা যাবে। তবে, নিয়োজিত নিরীক্ষা ফার্ম অপেক্ষা অতিরিক্ত নিরীক্ষা ফার্ম নিয়োগ আবশ্যক হলে সে বিষয়ের যৌক্তিকতা, সংশ্লিষ্ট ফার্ম থেকে বিগত সময়ে ব্যাংকটিতে নিয়োজিত থাকার তথ্য, নগদ সহায়তার কেসের সংখ্যা ও প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ নিরীক্ষা ফার্মের সংখ্যা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন, ২০১৫ এবং এ আইনের আওতায় জারি করা ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা ফার্ম তালিকাভুক্তি) বিধিমালা, ২০২২-এর তফসিল-১, অনুচ্ছেদ ৪ এর নির্দেশনাসহ এই বিষয়ে অন্যান্য নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে।
- ট্যাগ সমূহঃ
- ঋণ খেলাপি
![ঋণ খেলাপিদের জন্য এবার ‘এক্সিট সুবিধা’](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)