ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১ মে, ২০২৪ | ১২:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী রফতানি কমতে পারে ১৪ শতাংশ
১ মে, ২০২৪ | ১২:১৬ পিএম
![এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী রফতানি কমতে পারে ১৪ শতাংশ](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/05/01/20240501121616_original_webp.webp)
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের পর বিশ্ববাজারে শুল্ক সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। পণ্য বৈচিত্র্যকরণ পিছিয়ে থাকার কারণে এ সময়ে বাংলাদেশের রফতানি ৫ দশমিক ৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
এডিবির ‘এক্সপ্যান্ডিং অ্যান্ড ডাইভারসিফাইং এক্সপোর্টস ইন বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকায় এলডিসি গ্রুপের বাইরের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ তুলানমূলকভাবে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের চেয়ে কম জনসংখ্যার দেশগুলোর রফতানি অনেক বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রফতানি যেখানে ৫৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ভিয়েতনামের রফতানির পরিমাণ ৩৬০ বিলিয়নেরও বেশি, ইন্দোনেশিয়ার ২৪০ এবং থাইল্যান্ডের রফতানি প্রায় ৩২৩ বিলিয়ন ডলার। এমনকি মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরও রফতানিকারক দেশ হিসেবে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।
এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের রফতানি পণ্যে গড়পড়তা শুল্কের হার বেড়ে যেতে পারে। এতে কানাডায় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ, ভারতে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, জাপানে ৮ দশমিক ৭ ও চীনে রফতানির ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হতে পারে। এ ছাড়া আমদানিতে ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই, এমন অনেক পণ্য আবারও নেতিবাচক তালিকায় ঢুকে যেতে পারে।
জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় এলডিসি-বহির্ভূত দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। তবে এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে না। জিএসপি প্লাস সুবিধা না পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিএসপি প্লাস সুবিধা না পেলেও বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ‘ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম এনহান্সড প্রেফারেন্সেস’-এর আলোকে বাজার সুবিধা পাবে। তবে এই সুবিধা পেতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে দ্বৈত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত কাপড় ও সুতা ব্যবহার করতে হবে। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সংযোগ শিল্পের যে অবস্থা, সেই বিবেচনায় এই শর্ত পূরণ কঠিন হবে।
এডিবির প্রতিবেদনে, দেশের রফতানি খাতে বৈচিত্র্য না আসার কারণ হিসেবে প্রণোদনা বৈষম্যের কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশ সরকার রফতানি খাতে যে প্রণোদনা দিয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই তৈরি পোশাক খাতকে উদ্দেশ্য করে প্রণয়ন করা হয়েছে। শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা, আয়কর ছাড় বা রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার অনেকটি সব খাতের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু এসব সুবিধার বেশির ভাগই মূলত তৈরি পোশাক খাত পেয়েছে। দেশে ব্যবসার জগতে তৈরি পোশাক খাতের প্রভাব এতটাই বেশি যে নীতিগত সুবিধার সিংহভাগ তারাই পায় বলে মনে করে এডিবি।
এডিবি মনে করে, দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ কম হওয়ার কারণেও রফতানি খাত বহুমুখী হচ্ছে না। একদিকে বাংলাদেশে এফডিআই কম, অন্যদিকে যা আসে, তার বেশিরভাগ তৈরি পোশাক খাতকেন্দ্রিক। ফলে তৈরি পোশাক খাতের পক্ষে বৈশ্বিক বাজার ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য খাত বিদেশি বিনিয়োগ না পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও বাজারের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় প্রবেশের মতো সক্ষমতা তারা অর্জন করতে পারে না।
সংস্থাটির তথ্যানুসারে, ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ তার জিডিপির মাত্র ১ শতাংশের মতো এফডিআই পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের শুল্কের উচ্চ হার বা সুরক্ষামূলক বাজারের কারণে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করে এডিবি। উচ্চ শুল্ক থাকায় দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো রফতানিতে আগ্রহী না হয়ে দেশি বাজারে মনোযোগ দেয়।
সংস্থাটি মনে করে, শুল্ক কমানো হলে দেশি উৎপাদন উৎসাহিত হতে পারে। সে সঙ্গে সব রফতানি খাতকেও একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এডিবি।
![এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী রফতানি কমতে পারে ১৪ শতাংশ](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)