ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১১ মে, ২০২৪ | ১০:২৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ
কমছে পাটজাত পণ্যের রফতানি
১১ মে, ২০২৪ | ১০:২৯ এএম
![কমছে পাটজাত পণ্যের রফতানি](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/05/11/20240511102850_original_webp.webp)
কমছে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দশ মাসে এই খাত থেকে রফতানি আয় কমেছে ৭ শতাংশেরও বেশি। আর দশ মাসের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাটপণ্যের রফতানিতে সে লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় কম হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন
জানা গেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছিল ৯১২ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরে দেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আর এ বছরের দশ মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৮৩৮ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে দশ মাসে পাট খাত থেকে রফতানি আয় হয় ৭১৬ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলার। গত বছরের দশ মাসে আয় হয়েছিল ৭৭০ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চলতি বছরের দশ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট ও পাটজাত পণ্যে রফতানি কম হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর গত বছরের দশ মাসের চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, এই দশ মাসে পাট খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় কমেছে কাঁচা পাটে। কাঁচা পাটে দশ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৩৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আর গত বছরের দশ মাসের চেয়ে রফতানি কমেছে ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া পাটের সুতা রফতানিতে আয় কমেছে ৫ শতাংশের মতো এবং পাটের তৈরি ব্যাগসহ অন্যান্য পণ্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
পাটপণ্যের রফতানিকারকরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বজুড়ে পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। যদিও বিশ্বমানের পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পাটের উৎপাদন থেকে শুরু করে পাটপণ্য নিয়ে গবেষণা, নকশার উন্নয়ন, বিপণনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি সমন্বিত পথনকশা দরকার। সেই পথনকশা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলেই পাটপণ্যের রফতানি বাড়বে।
বিশ্বজুড়ে পাটজাত পণ্য, বিশেষ করে বহুমুখী পাটপণ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা থাকলেও সেই রফতানি কম বাংলাদেশের। দীর্ঘদিন ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির মধ্যে পাটের সুতার রফতানিই বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি হচ্ছে কাঁচা পাট। আর তৃতীয় হচ্ছে পাটের বস্তা।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। বছরে দেশে ৯০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হয়। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাটপণ্যের রফতানি ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
এ খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, এক টন কাঁচা পাট বা বস্তার পরিবর্তে বহুমুখী পাটপণ্যের দাম ৫০ গুণ বেশি হয়ে থাকে। সম্ভাবনা থাকায় এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা আসছেন। তবে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতের পাটকলগুলোয় ১০৬-১০৭ ধরনের কাপড় তৈরি হয়। দেশে তৈরি হয় মাত্র চার-পাঁচ ধরনের কাপড়। তা ছাড়া পণ্যের নকশা নিয়েও ভুগছেন উদ্যোক্তারা। টেকনিক্যাল টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, গার্ডেনিং বা বাগান, অটোমোবাইল ও প্যাকেজিংয়ে পাটপণ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এখনও প্যাকেজিং পণ্যই বেশি। এখান থেকে বহুমুখী পাটপণ্যের রফতানি বাড়াতে হলে উদ্যোক্তাদের নকশা সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি পাটকলগুলোকে আধুনিকায়নে সরকারকে সহায়তা দিতে হবে। বহুমুখী পাটপণ্যের বাজার ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বিডার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে শুধু পাটের ব্যাগের বার্ষিক চাহিদা ৫০ হাজার কোটি পিস। পাটপণ্যের উৎপাদন খরচ বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।
বিডার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাটের তৈরি গৃহসজ্জার পণ্যের চাহিদার পাশাপাশি পাটের তৈরি শপিং ব্যাগ, জিওটেক্সটাইল ও ফ্লোর কভারের চাহিদাও বাড়ছে। এ ছাড়া পাটকাঠির তৈরি চারকোলের চাহিদাও রয়েছে চীনসহ বিভিন্ন দেশে। পণ্যটি রফতানি করে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। ২০২৫ সালে চারকোলের বৈশ্বিক বাজারের আকার দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে। এ ছাড়া পাটভিত্তিক জিওটেক্সটাইলের বৈশ্বিক বাজারের আকার বেড়ে চলতি বছর ২০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
![কমছে পাটজাত পণ্যের রফতানি](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)