ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ২৭%, উৎপাদনে প্রভাব পড়বে কি
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১:০ এএম
![কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ২৭%, উৎপাদনে প্রভাব পড়বে কি](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/14/20241214160341_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এর মধ্যে বিতরণ করতে পেরেছে ৬ হাজার ৪৫৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ২৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।
সাম্প্রতিক দুটি বন্যায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার নিত্যপণ্যের বাজারেও রয়েছে অস্থিরতা। এ অবস্থায় কৃষি ঋণ বিতরণ কমে আসায় আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দুটি বন্যা ও এর আগের খরার প্রভাবে এবার আরো বেশি করে কৃষি ঋণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণে জোর না দেয়ায় ঋণ প্রবাহ কমেছে। এতে উৎপাদন কমে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সামনের দিনগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আরো জোরালো হয়ে উঠতে পারে।
যদিও ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, জুলাই-আগস্টের অস্থিরতা ও ব্যাংক খাতে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী অনিশ্চয়তার প্রভাবে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষিতে ঋণপ্রবাহ কমলেও সামনের দিনগুলোয় তা আবারো বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই প্রকৃত ঋণ বিতরণ কমে এসেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বন্যার প্রভাব মোকাবেলায় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কৃষি ঋণ প্রবাহের এমন চিত্র ভালো কিছুর লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের এ পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক দুটি বন্যা এবং খরাসহ নানা উপদ্রবে এবার কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বন্যা-উত্তর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবার আরো বেশি করে ঋণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না থাকায় ঋণ প্রবাহ কমেছে। ফলে রবি মৌসুমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আমদানি নিশ্চিতের পথে বড় বাধা হয়ে উঠেছে ডলার সংকট। তাই সার্বিক কৃষিপণ্য সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরো উস্কে দিতে পারে।’
কৃষি ঋণ বিতরণের উপখাতভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার মোট কৃষি ঋণ বিতরণে শস্যের অবদান গত অর্থবছরের ৪৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৪৩ শতাংশে। আর দারিদ্র্য দূরীকরণে ঋণ বিতরণের অংশ ৮ শতাংশ নেমে এসেছে ৪ শতাংশে। তবে মোট ঋণ বিতরণে মৎস্য এবং পশুপালন ও পোলট্রি খাতের বিতরণের অবদান গত বছরের তুলনায় বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে ১২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। বাকি ২৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করবে দেশের বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে গত মাসে বিদেশী ব্যাংকগুলো থেকে কৃষি ঋণের প্রবাহ কমেছে প্রায় ৭১ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় এ হার ছিল ৩১ শতাংশ। আর সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।
তবে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রভাবে কৃষি ঋণ বিতরণ কিছুটা কমেছে। এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, জুলাই-আগস্টে সার্বিক ঋণ প্রভাব কমে এসেছিল। তখন মানুষ বের হতে পারেনি। আবার ১০-১২ ব্যাংক কিছুটা সমস্যায় পড়েছিল। তারাও তখন ঋণ দিতে পারেনি। তাই সার্বিক কৃষি ঋণ বিতরণে এটা প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু কৃষি ঋণের টার্গেট দেয়া থাকায় এটা আমাদের দিতেই হবে। আগামীতে আশা করছি ঋণ বিতরণ বাড়বে।’
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ঋণ পরিশোধের দিক থেকে বরাবরই সেরা পারফরম্যান্স আসে কৃষি খাত থেকে। খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের অনুপাতে আদায়ের হারের দিক থেকে কৃষির অবস্থান প্রতি বছরই শীর্ষে। এবারো এ খাতে ঋণ বিতরণ কমলেও ঋণ আদায় আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ আদায় হয়েছে ৯ হাজার ২০৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ১৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহকে একটি বড় প্রভাবক বলে মনে করছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ঋণ না পেলে প্রান্তিক কৃষক কীভাবে উৎপাদন করবে? গতবার আলু উৎপাদন কম হওয়ায় চালের ওপর চাপ পড়েছে। তাই আগামীতে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি ঋণের বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে তৎপর হতে হবে।’
এদিকে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গ্রামীণ ব্যাংক এবং বড় ১০টি এনজিও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কৃষি খাতে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৭১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। এনজিওগুলো ঋণ বিতরণের প্রভাব ঠিক রাখতে পারলেও পিছিয়ে পড়েছে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো।
কৃষিতে ঋণপ্রবাহ কমে আসার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কিছু জানা যায়নি। আর কৃষিতে ঋণ প্রবাহ কমে আসায় উৎপাদনে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানতে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
![কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ২৭%, উৎপাদনে প্রভাব পড়বে কি](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)