ঢাকা শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ - ১১:৪০:১৯ এএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

১৪ জুলাই, ২০২৪ | ৮:৪০ এএম

অনলাইন সংস্করণ

খেলাপি ঋণ বাস্তবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ

১৪ জুলাই, ২০২৪ | ৮:৪০ এএম

খেলাপি ঋণ বাস্তবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘দেশের রফতানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল বের হয়েছে। গরমিল আছে আর্থিক খাতের অন্যান্য তথ্যেও। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১১ শতাংশ বলা হলেও বাস্তবে সেটি ২০-২৫ শতাংশ। এ খাতের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ না করে কার্পেটের নিচে রেখে দিলে একসময় গন্ধ বের হবেই। এভাবে সমস্যা জিইয়ে রাখলে কোনো সমাধান আসবে না।’

 

‘বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) উদ্যোগে গতকাল রাজধানীতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 


প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার আনা হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এটা খুবই হতাশাজনক। দেশের স্বার্থেই এখন ব্যাংক খাতের সংস্কার খুবই জরুরি।’

 

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে, সেটা ভালো। কিন্তু নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সংস্কার দরকার। আমরা ব্যাংকগুলোর আমানত খেয়ে ফেলেছি। এভাবে কত দিন ব্যাংক চলবে? ব্যাংক খাত নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। সেটা করতে হবে সরকারকেই। বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে নয়। ব্যাংক খাতে আজ যে এই অবস্থা হলো, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’

 

 


ড. মনসুর আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে আর্থিক খাতে দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। ফলে এ বাজারের উন্নতি ঘটেনি। এখন ব্যাংক আমানতের নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঋণের সুদহার বাড়ছে। আসলে সম্পদ বাইরে চলে যাওয়া অব্যাহত থাকলে এসব ঠিক হবে না। তাই দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই।’

 

আর্থিক দুরবস্থার কারণে বাংলাদেশ দিন দিন ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ঋণনির্ভর হয়ে পড়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার সক্ষমতাও কমছে। ভারত থেকে হতাশ হয়ে আসতে হয়েছে, চীনও সাড়া দেয়নি। অন্যদিকে পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। ফলে এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই। এ কারণে সরকার জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না। অনেক বিদেশী কোম্পানি তাদের দেশে অর্থ নিতে পারছে না।’

 

 

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ঋণ আদায় না করে ঋণের সুদকে আয় দেখিয়ে বেশি মুনাফা দেখাচ্ছে। সেই মুনাফার অর্থ থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে, আবার সরকারকে করও দিচ্ছে। আসলে ওই সব ব্যাংকের কোনো আয়ই হয়নি। আমানতের অর্থ লুটে খাচ্ছে কয়েকটি গোষ্ঠী। সরকারের সহযোগিতায় তারা পুষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের কারণেই এখন আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।’

 

 

চাকরির ভয় পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকলে আর্থিক খাত ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ড. মনসুর বলেন, ‘আর্থিক খাতে ভঙ্গুরতার পরিণতি জনগণকে ভোগ করতে হয়। যারা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন, তাদের কিছু হয় না। এজন্য আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। না হলে খাতটি আরো খারাপ হয়ে পড়বে। সরকারকে এ বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।’

 

 

ড. মনসুর বলেন, ‘টাকা ছাপিয়ে অচল ব্যাংক টিকিয়ে রাখার দরকার নেই। ব্যাংক রক্ষার নামে টাকা ছাপানো অব্যাহত রাখা হলে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার বৃহত্তর স্বার্থে টাকা ছাপানো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

 

 

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় সভায় ইআরএফের পক্ষ থেকে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, দেশে এখন আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক খাত। একটি দেশের ব্যাংক খাতের ভালো-মন্দের বিষয়টি নির্ভর করে সে দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর। আরো পরিষ্কারভাবে বললে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান আসলে কেমন চাইছেন তার ওপর। বর্তমান সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো অনেক বড় বড় প্রকল্প হয়েছে। এসব প্রকল্পের সুফল হিসেবে কর্মসংস্থান বেড়ে মূল্যস্ফীতি নাগালের মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু ডলার সংকট, ব্যাংক খাতে দুরবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।

 

 

প্রবন্ধে আরো বলা হয়, মোটা দাগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান তিনটি কাজ হলো মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখা এবং তদারকি ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা। কিন্তু এ তিনটি দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের তথ্য প্রকাশ সীমিত করে ফেলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ গোপনীয়তার মাধ্যমে আর্থিক খাতকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটি কেউ জানতেও পারছে না।

খেলাপি ঋণ বাস্তবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ