ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৯:৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
গতি ফিরছে অর্থনীতিতে
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৯:৭ এএম
ছবি: সংগ্রহীত
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয় এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। জুলাইজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি ছিল স্থবির। দায়িত্ব নিয়েই দেশের আর্থিক খাতে বড় সংস্কারে হাত দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা দেন, দেশের অর্থনীতির স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীল করাই মূল চ্যালেঞ্জ। এরপর একে একে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, পুঁজিবাজার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে আর্থিক খাতে বড় ধরনের আস্থা তৈরি হয়। ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে ডলার সরবরাহ। গত ২১ দিনে এসেছে ১৬৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয়েও নতুন আশা দেখা দেয়। কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আর্থিক খাতে। খুলে যায় পোশাক কারখানা। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থার সংকট কাটতে শুরু করে। ব্যাংক খাতে সংস্কার হওয়ায় নতুন বিনিয়োগের কথা ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। একই সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো থেকে মিলছে ইতিবাচক সাড়া।
রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে গতি ফিরতে শুরু করেছে। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ডলারের তেজ কিছুটা কমেছে। প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পর বহির্বিশে^ ইতিবাচক সাড়া মিলছে। উন্নয়ন সহযোগীরাও সাড়া দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে ১৬৩ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে সাত কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের মাসের একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। সে হিসাবে চলতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের প্রথম ২১ দিনে দেশে এসেছে ১৬৩ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স। এ সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৮ কোটি সাত লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১০৭ কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪০ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
এর আগে গত জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসার পর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত আগস্টে চলতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেন। পরে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়ে দেন প্রবাসীরা। সংকট কাটিয়ে খোলা হয় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা। ফলে ধাক্কার পর আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। চলতি মৌসুমে কৃষি উৎপাদন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যদিও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা উজান ঢলের কারণে দেশের কয়েকটি জেলার কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকার ও সর্বস্তরের জনগণের প্রচেষ্টায় আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বানভাসি মানুষ।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ প্রায় সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশে সহযোগিতা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ইতোমধ্যে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার হতে শুরু করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের আগের অবস্থা আর পরের অবস্থা পুরোটাই বিপরীত। এখন মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়ছে। এ ছাড়া বহির্বিশ্বেও একটা ইতিবাচক সিগনালও যাচ্ছে। যা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে অস্বস্তিকর হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে এমন মূল্যস্ফীতি আগে দেখা যায়নি।
মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে বেশি পড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর। যদিও গত আগস্টে মূল্যস্ফীতির এই চাপ সামান্য কমে এসেছে বলে জানিয়েছি বিবিএস। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। সরকার এই মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে নিত্যপণ্য আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম কমাতে হলে এ খাতের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সুদের হার বাড়িয়েছে। এখন ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার সাড়ে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে। জুলাই মাসের পর থেকে ৯ শতাংশ থেকে সুদের হার বাড়ানো শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদের হার বাড়িয়ে বাজারের অর্থের প্রবাহ কমাতে চায় সরকার। এতে মানুষের হাতে টাকা কম যাবে, ফলে চাহিদাও কমবেÑ এমন প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এমন উদ্যোগে আগামীতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ।