ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
গুদাম থেকে ২৩১ কোটি টাকার সার লোপাটে জড়িতরা অধরা
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:০ পিএম

ছবি: সংগ্রহ
যমুনা সার কারখানা ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) গুদাম থেকে ২৩১ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) হিসাব সম্পর্কিত নিরীক্ষায় ২৫ হাজার ৪৮৯ টন ইউরিয়া সার গুদামে কম পাওয়া যায়। ২০২১ সালে গুদামের স্টক রেজিস্টারে বর্ণিত মজুদের চেয়ে বাস্তব যাচাইয়ে এ সার কম পাওয়ায় সরকারের ২৩১ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হলেও সার আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি বিসিআইসির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে দুর্নীতির এ তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন জামালপুরের যমুনা সার কারখানার (জেএফসিএল) গুদামে ২০২১ সালের স্টক রেজিস্টারে বর্ণিত মজুদের চেয়ে বাস্তব যাচাইয়ে ১৯ হাজার ১৩৩ টন সার কম থাকায় সরকারের ১৮৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। লগবই অনুযায়ী, কারখানায় মজুদ করা সারের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৩৮৩ টন দেখানো হলেও বাস্তবে বাল্ক গুদাম ও বস্তাবন্দি সারের পরিমাণ রয়েছে ৭৪ হাজার ২৫০ টন। অর্থাৎ জেএফসিএলের সার বাস্তব গণনায় ১৯ হাজার ১৩৩ টন কম রয়েছে, যার মূল্য প্রতি টন ৯৬ হাজার টাকা হিসাবে ১৮৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, এত বিপুল পরিমাণ সার ব্যবস্থাপনাগত ক্ষতি বা ঝড়-বৃষ্টির কারণে ঘাটতি হতে পারে না, তাই এ সার আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
এ বিষয়ে জেএফসিএল কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা বিভাগকে লিখিত জবাবে জানিয়েছে, কারখানায় সার সংরক্ষণের জন্য ২টি গুদাম রয়েছে যার ধারণক্ষমতা ১২ হাজার টন। পূর্ণমাত্রায় সার উৎপাদন হলে ৭ দিনের উৎপাদিত সার রাখার জায়গা থাকে না। এরপর আবার আমদানি করা সার এ কারখানায় রাখা হয়। এ সময়ে কারখানায় আমদানি করা সারসহ মোট সার ছিল ৯০ হাজার ৪২৬ টন। সার গুদামের বাইরে মাঠে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। ২০২০ সালের ২০ মার্চ সাইক্লোন আম্ফানের কারণে বৃষ্টির পানি বাইরের সারের খামারে প্রবেশ করার বিষয়টি বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়কে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। ঘাটতি সার আত্মসাৎ করা হয়নি, গুদামের বাইরে সার রাখায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ সারের ঘাটতি হয়েছে, যা বিসিআইসির জারি করা হ্যান্ডলিং লস-সংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী সমন্বয়যোগ্য। অভিযোগটি বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের বিভাগীয় তদন্তাধীন।
নিরীক্ষা বিভাগ বলছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সারের ব্যালেন্স কম হওয়ার সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্ফানের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১৯ হাজার ১৩৩ টন সার ঘাটতি হয়েছেÑএ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। বিসিআইসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই মন্তব্য করা হয়েছে, ওই সার আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে ক্ষতির টাকা দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায় করা আবশ্যক।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিভিন্ন গুদামে ৩ হাজার ৯৬৮ টন সার বাস্তব গণনায় কম হওয়ায় বিসিআইসির ক্ষতি হয়েছে ৩৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরে বাফার গুদামে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবরের লগবুক রেজিস্টার অনুযায়ী সর্বমোট মজুদ ছিল ৫ হাজার ১৪৫ দশমিক ৯০ টন সার। কিন্তু ওইদিন বাস্তব গণনায় মজুদ পাওয়া যায় ২৮০৩ টন সার। সার কম পাওয়া যায় ২৩৪২ টন। গাইবান্ধা বাফার গুদামে সার কম পাওয়া যায় ২৯১ টন। নাটোর বাফার গুদামে কম পাওয়া যায় ১৫৫ টন। দিনাজপুর বাফার গুদামের সারের বস্তা গণনায় সার কম পাওয়া যায় ২৩ হাজার ৫৬০ বস্তা। প্রতি বস্তায় সারের পরিমাণ ৫০ কেজি হওয়ায় মোট ঘাটতি সারের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৭৮ টন। এ বিপুল পরিমাণ সার আত্মসাৎ করা হলেও আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণসহ ক্ষতির টাকা আদায় করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পটুয়াখালী বাফার গুদামে ২৩৮৭ টন ইউরিয়া সার আত্মসাৎ হওয়ায় ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে বিসিআইসির পক্ষ থেকে নিরীক্ষা বিভাগকে লিখিত জবাবে জানানো হয়, বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ২ হাজার ৩৮৭ টন সার আত্মসাৎ করার জন্য পটুয়াখালী বাফার প্রাক্তন ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদকে (উপ- ব্যবস্থাপক- ফায়ার অ্যান্ড সেফটি) দায়ী করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগনামা জারি করেছে।
এদিকে বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বগুড়া বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ ২০২০-২১ অর্থবছরে নিয়মবহির্ভূতভাবে গুদামের ১০৬২ টন ইউরিয়া সার দুজন পরিবহন ঠিকাদারকে দেওয়ায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিসিআইসি বাণিজ্যিক শাখার পত্রের মাধ্যমে মজুদবহির্ভূত ও ঠিকাদারভিত্তিক ছেঁড়া-ফাটা হিসেবে জমাবহির্ভূত ওই সারের ৫০০ টন মেসার্স পোটন ট্রেডার্স এবং ৫৬২ টন সার মেসার্স সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিংকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিসিআইসির স্টোর কন্ট্রোল ম্যানুয়ালের আর্টিকেল নং ২০.১ মোতাবেক উদ্বৃত্ত/হিসাববহির্ভূত মালামাল বিকল্প ব্যবহার করতে হবে অথবা ডিসপোজাল করতে হবে। আর্টিকেল নং ২০.৭ মোতাবেক উদ্বৃত্ত মালামাল বিক্রি করা যাবে। উদ্বৃত্ত মালামাল ঠিকাদারকে বিনামূল্যে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত বা হিসাববহির্ভূত ১০৬২ টন ইউরিয়া সার ২ জন ঠিকাদারকে নিয়মবহির্ভূতভাবে দেওয়া হয়েছে যার বাজারমূল্য ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৫০ টাকা।
