ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:১৬:২২ পিএম

চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে কমেছে টোল, চলবে ১০ ধরনের যান

৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৪:৪০ পিএম

চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে কমেছে টোল, চলবে ১০ ধরনের যান

ছবি: সংগ্রহ

চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হার কমানো হয়েছে। গাড়ি ভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে টোল। একইসঙ্গে আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলবে ১০ ধরনের যানবাহন। তবে চলবে না মোটরসাইকেল।

 

আগের টোলের হার পরিবর্তন করে নতুন করে প্রস্তাব দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য গত ৩ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নতুন টোলের প্রস্তাবটি ২৭ নভেম্বর অনুমোদন দেয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায় করতে যাচ্ছে সিডিএ। এজন্য দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে।


টোলের হার কমার বিষয়টি বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকালে নিশ্চিত করেছেন সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়বারে সংশোধিত টোলের হারের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ফলে টোল আদায়ে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি আমরা। শিগগিরই টেন্ডার ডাকা হবে। গত ২৮ আগস্ট থেকে এক্সপ্রেসওয়ে পরীক্ষামূলক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যানবাহন থেকে কোনও টোল আদায় করা হচ্ছে না।’


ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় গত বছরের ১৪ নভেম্বর এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সভায় মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে ওই সময় এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তনের পর গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।

 


সিডিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর সিডিএর বোর্ড সদস্যসহ চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আসে। গত ২ সেপ্টেম্বর আগের সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনূসের নিয়োগ বাতিল করা হয়। সেখানে প্রকৌশলী নুরুল করিমকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর বোর্ড সভায় নতুন করে টোলের হার নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এটি ২৭ নভেম্বর অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।

 

এখন চলবে ১০ ধরনের যানবাহন

 

প্রথম দফায় চূড়ান্ত হওয়া টোল অনুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে নয় ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমতি দিয়ে টোলের হার নির্ধারণ করেছিল মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় দফায় ১২ ধরনের গাড়ি চলাচলের সুযোগ রেখে টোলের হার কমানোর প্রস্তাব দেয় সিডিএ। এর মধ্যে ১০ ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমতি দিয়ে টোলের হার কমিয়ে দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়। এতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

 

প্রথম দফায় চূড়ান্ত হওয়া টোল ছিল, প্রাইভেটকার ১০০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ২০০, মিনিবাস ২০০, বাস ৩০০, ট্রাক (চার চাকা) ২০০, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০ ও কাভার্ডভ্যান ৫০০ টাকা।

 

কোন গাড়িতে কত কমলো টোল

 

সর্বশেষ চূড়ান্ত হওয়া টোল অনুযায়ী, প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (চার চাকা) ২০০, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০, কাভার্ডভ্যান ৫০০ ও অটোরিকশা ৩০ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ১২ ধরনের গাড়ি চলাচলের যে প্রস্তাব দিয়েছিল সিডিএ, তার মধ্যে ট্রেইলার ও মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমোদন মেলেনি। আগেরবারও এই দুটি যান চলাচলের অনুমতি ছিল না।

 

এখন ফ্রিতে চলছে মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন

 

সিডিএ জানায়, গত ২৮ আগস্ট থেকে এক্সপ্রেসওয়ে পরীক্ষামূলক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে না। ফলে প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসের পাশাপাশি ফ্রিতে চলছে মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পগুলো নির্মাণ না হওয়ায় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারবে। মাঝখানে ওঠানামার সুযোগ নেই।

 

সিডিএ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরমুখী এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে তা ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার। প্রাথমিক সমীক্ষায় ২০টি র‌্যাম্প (যানবাহন ওঠানামার পথ) নির্মাণ করার কথা থাকলেও করা হয়েছে ১৪টি। এর থেকে আরও চার-পাঁচটি অপ্রয়োজনীয় র‌্যাম্প কমানোর চিন্তা করছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। র‌্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে আছে মাত্র অর্ধেক।

 

চালুর আগে এত পরিবর্তনের কারণে বেড়ে গেছে ব্যয়ও। সিডিএর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান র‍্যাঙ্কিন। বর্তমানে নয়টি র‌্যাম্প দিয়ে যানবাহন ওঠানামা করবে। এর মধ্যে জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, নিমতলায়, কেইপিজেড, ফকিরহাট, সিইপিজেডে ওঠানামার র‍্যাম্প আছে। জিইসি মোড় থেকে ওঠে পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে নামার সুযোগ রয়েছে। আবার পতেঙ্গা থেকে ওঠে নগরের টাইগারপাস, লালখান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নামার জন্য র‍্যাম্প রয়েছে।

 

প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, প্রথম দফায়ও তারা টোলের সহনীয়ভাবে নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় সিডিএর প্রস্তাবের চেয়ে একটু বেশি নির্ধারণ করে টোলের হার চূড়ান্ত করেছিল। এখন নতুন সরকারের আবার সহনীয় টোলের হার নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই আগে চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার কমিয়ে নতুন করে নির্ধারণ করে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেটির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ফলে এখন থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে গাড়ি চলাচলেও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

 

মাহফুজুর রহমান জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর পক্ষপাতী নন তারা। কিন্তু অটোরিকশা বন্ধ করে দিলে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের সুযোগ কমে যাবে। মানুষ যাতে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

 

বেড়েছে সময় ও প্রকল্প ব্যয়

 

এক্সপ্রেসওয়ে চালুর কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। পরে তা পরিবর্তন করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এত বছরেও নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এর সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে।

 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার সময় তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধন হলেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২২ সালে নকশা সংশোধন করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরো শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে।

চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে কমেছে টোল, চলবে ১০ ধরনের যান