ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৫:২৬:০৪ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:৪৪ এএম

অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রাম বন্দর আবারও বিদেশিদের লক্ষ্যে

৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:৪৪ এএম

চট্টগ্রাম বন্দর আবারও বিদেশিদের লক্ষ্যে

ছবি: সংগ্রহ

দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিল বিগত সরকার। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছিল এজন্য। বিনা প্রতিযোগিতায় ইতিমধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) বিদেশিদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের দিয়ে দেওয়ার জন্য আবারও তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

 


পিপিপি অথরিটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার এনসিটি নিয়ে তাদের কার্যালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বিদেশি কোম্পানির লোকজন উপস্থিত থাকবেন বলে পিপিপির ঐ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

 

বন্দর কার্যক্রম বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা উঠে পড়ে লাগেন। পিসিটিকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ তিনি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারলেও এনসিটির বিষয়টি আটকে যায়। যদিও এনসিটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি ডিপি ওয়ার্ল্ড নামক ঐ কোম্পানি নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের মোট কনটেইনার পণ্য ওঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি দিয়ে। সবচেয়ে আধুনিক সব যন্ত্রে সজ্জিত এই টার্মিনাল থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ২০০৭ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভেড়ার আগে একটি কনটেইনার জাহাজকে বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকত গড়ে ১২ থেকে ১৫ দিন। আধুনিক যন্ত্র এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় জাহাজের গড় অপেক্ষমাণ সময় ১২ দিন থেকে কমে নেমে এসেছে দুই থেকে আড়াই দিনে।

 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এজন্য সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজর পর্যন্ত নিয়োগ করেছিল। তখন বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার একক আধিপত্যের কারণে বিদেশি কোম্পানি দিয়ে এনসিটি চালানোর কাজ এগোতে থাকে।

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রেক্ষাপটে এনসিটি বিদেশি অপারেটর দিয়ে পরিচালনার উদ্যোগে ভাটা পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ডিপি ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত গত ২৯ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত্ করলে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। 

 

এদিকে, বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার বিরোধিতা করছেন স্থানীয় অপারেটররা। তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর এলে বন্দরের রাজস্ব আয় হবে ঠিকই, কিন্তু রাজস্বের সিংহভাগ চলে যাবে বিদেশে। তাদের মতে, এনসিটি এখন যেভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের একক নিয়ন্ত্রণে আছে, সেটি আর থাকবে না। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ঝুঁকি তৈরি হবে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দরের হাতে ৫৫ শতাংশ কনটেইনার ওঠানামার জন্য বিকল্প কোনো টার্মিনালও নেই।

 

বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, নতুন স্থানে একটি আধুনিক টার্মিনাল তৈরি করে সেটি পরিচালনার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য অপারেটরদের দেওয়া যেতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে চার গুণ বড় প্রস্তাবিত ‘বে-টার্মিনাল’ কিংবা ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর’, এমনকি ‘পায়রা সমুদ্রবন্দরে’ নতুন টার্মিনাল নির্মাণে বিদেশিদের আগ্রহকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। এতে বিদেশিরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে। বন্দরের টাকায় গড়া, বন্দরের কেনা যন্ত্রপাতি দিয়ে বিদেশি অপারেটরদের টার্মিনাল পরিচালনায় সফলতার কিছুই নেই। এসব বিবেচনায় এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে স্থানীয় অপারেটররা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর আবারও বিদেশিদের লক্ষ্যে