নতুন বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচ বছরের চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ায় এই পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে, রাশিয়ার দীর্ঘ সময়ের গ্যাস সরবরাহের আধিপত্যের পর্দা নামল এবং ইউরোপীয় গ্যাস বাজারে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হলো।

আরও পড়ুন

প্রতিকূলতা ছাপিয়ে ইউরোপে বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বলেছেন, "আমরা রাশিয়াকে ইউক্রেনের রক্তের বিনিময়ে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ উপার্জনের অনুমতি দিতে পারব না।" ইউক্রেন ইউরোপীয় কমিশনকে গ্যাস সরবরাহ লাইন প্রস্তুতির জন্য এক বছরের সময় দিয়েছে। ইউক্রেনের সরকার গ্যাস ট্রানজিট বন্ধ করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে, যার ফলে স্লোভাকিয়া এবং অস্ট্রিয়ার মতো কয়েকটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রকে গ্যাস সংকটের মুখে পড়তে হতে পারে।

ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ইউক্রেনের মাধ্যমে গ্যাস ট্রানজিট বন্ধ হলেও মহাদেশের গ্যাস ব্যবস্থা স্থিতিস্থাপক এবং সহনীয় রাখার জন্য যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। তবে, রাশিয়া এখনো কৃষ্ণ সাগরের তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে হাঙ্গেরি, তুরস্ক এবং সার্বিয়াতে গ্যাস পাঠানোর সক্ষমতা রাখে।

২০২২ সালে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে ইইউ দেশগুলো রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানিতে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে ইউরোপের গ্যাস আমদানির পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে ১০ শতাংশেরও কম হয়ে যায়। তবে, স্লোভাকিয়া এবং অস্ট্রিয়া এখনও রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিকল্প গ্যাস সরবরাহের উৎস খুঁজে বের করার মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। স্লোভাকিয়া ও অস্ট্রিয়া ইতোমধ্যে বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, কিন্তু ইউক্রেনের গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণে সেগুলোর ওপর চাপ পড়তে পারে।

রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে স্লোভাকিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কো সফর করেছেন এবং ইউক্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য যে, ইউক্রেন ছিল ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস রফতানির প্রাচীনতম রুট। সোভিয়েত আমলে নির্মিত একটি পাইপলাইন দিয়ে এই গ্যাস সরবরাহ করা হতো, যা দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপের গ্যাস চাহিদা পূরণের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল।

এবারে ইউক্রেনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।