ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:১০:১৯ পিএম

ছোট জাহাজের দিকে ঝুঁকছে শিপিং কোম্পানিগুলো

৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:০ পিএম

ছোট জাহাজের দিকে ঝুঁকছে শিপিং কোম্পানিগুলো

ছবি: সংগ্রহ

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, উৎপাদন কেন্দ্রের পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ বিভিন্ন ঘটনায় গত কয়েক বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য নতুন রূপ লাভ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে বিভক্ত হয়েছে বাণিজ্য রুট, যার প্রভাব পড়েছে নতুন সামুদ্রিক জাহাজের ক্রয়াদেশে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনের পরিবর্তে আজকাল এশিয়ার অন্য বন্দর হয়ে পরিচালিত হচ্ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যের বড় একটি অংশ। ফলে জাহাজ মালিকরা ক্রমবর্ধমান বড় জাহাজের যুগ থেকে সরে এসে ছোট জাহাজের দিকে ঝুঁকছেন। 


শিপব্রোকার ব্রামারের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালে ১৭ হাজারটির বেশি ২০ ফুট কনটেইনার (টিইইউ) ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি জাহাজ সরবরাহ করবে নির্মাতা। যেখানে ২০২০ সালে সরবরাহ করা হয়েছিল ১৭টি। অন্যদিকে এ বছর ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৯৯৯ টিইইউ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৮৩টি মাঝারি আকারের জাহাজ হস্তান্তর হবে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ।


ব্রামারের কনটেইনার বাজার বিশ্লেষক জোনাথন রোচ বলেন, ‘১৬ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ শিপিং কোম্পানির জন্য জনপ্রিয় “ওয়ার্কহর্স” হয়ে উঠবে।’

 

শিল্প বিশেষজ্ঞরা আরো কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশগত বিধিনিষেধ ও বাণিজ্য বিঘ্নের হুমকি। এতে লোহিত সাগর পরিস্থিতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় লোহিত সাগর হয়ে যাতায়াতকারী জাহাজে হামলা শুরু করে হুথি বিদ্রোহীরা। এতে এক বছরের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ রুটটি এড়িয়ে চলছে শিপিং কোম্পানিগুলো, যা বৃহৎ জাহাজের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে।

 

এ ধরনের বাণিজ্য বিঘ্ন শিগগিরই কাটছে না বলে ধারণা অনেকের। কেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ মাসেই হোয়াইট হাউজে ফিরছেন। এরই মধ্যে তিনি চীন থেকে আমদানিতে শুল্ক আরো বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন।

 

শিপিং মার্কেটবিষয়ক সংস্থা জেনেটার প্রধান বিশ্লেষক পিটার স্যান্ডের মতে, এরই মধ্যে পণ্য সংগ্রহে শুধু চীনের ওপর নির্ভর থাকার নীতি বদলে ফেলেছে কোম্পানিগুলো। তারা এখন এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের ছোট ছোট উৎপাদন কেন্দ্রে সরবরাহ চেইন প্রসারিত করছে।

 

পিটার স্যান্ড আরো বলেন, ‘তখনই আপনি শুধু বড় আকারের জাহাজ ব্যবহার অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিপূর্ণ বলতে পাবেন, যদি আপনার কাছে ধারণক্ষমতা পূরণের মতো কার্গো থাকে। তা না থাকা মানে আপনি অর্থ হারাচ্ছেন।’

 

এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার শিপিং লাইনের একজন সিনিয়র নির্বাহী স্যান্ডের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘উৎপাদন যদি ভারত ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর হয়, তবে সম্ভবত বড় জাহাজকে দুই বা তিনটি বন্দরে পূর্ণ করার আশা ততটা যৌক্তিক নয়।’

 

কয়েক দশক ধরে বৈশ্বিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও চাহিদা বিবেচনা করে বড় জাহাজের ক্রয়াদেশের প্রবণতা বিদ্যমান ছিল এ শিল্পে। সে প্রবণতার কমার পেছনে বিভিন্ন অনুঘটক রয়েছে। এর মধ্যে আরো একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। ২০২১ সালে ২ লাখ ২০ হাজার টন ওজনের ২০ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ এভার গিভেন দুর্ঘটনায় পড়ে সুয়েজ খালে আটকে যায়। এতে ছয়দিন খালটি বন্ধ থাকলে বৈশ্বিকভাবে নতুন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়।

 

মাঝারি আকারের জাহাজগুলো জনপ্রিয়তার দিক থেকে বৃহত্তমকে ছাড়িয়ে গেলেও ২০২৪ সালে কনটেইনার শিপিং শিল্পে মুনাফার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ১৮ হাজার টিইইউর তুলনায় বড় জাহাজের চাহিদা আবার বেড়েছে। ব্রামারের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরের শুরুর দিকে এ আকারের ৭৬টি জাহাজের ক্রয়াদেশ ছিল, যেখানে ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৪৫। শুধু শিপিং শিল্পের নেতৃত্বে থাকা মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি গত সেপ্টেম্বরে ২১ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতার ১০টি জাহাজের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল।

 

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সুয়েজ খালের কাছে জাহাজে হামলা চালানোর ফলে শিপিং খরচ বেড়ে যায় এবং জাহাজ সরবরাহ কমে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাহাজ মালিকদের আয় বেড়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লোহিত সাগরের এ হামলা বলে দিচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতি মানিয়ে নিয়ে জাহাজ মালিকদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার কতটা প্রয়োজন।

 

বড় জাহাজগুলো প্রধানত সুয়েজ খাল দিয়ে এশিয়া-ইউরোপের বড় আকারের বাণিজ্য পরিবহনে ব্যবহার হয়। কিন্তু পানামা খালের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জলপথ অতিক্রম করতে পারে না এসব জলযান।

 

আইনি সংস্থা এইচএফডব্লিউর অংশীদার উইলিয়াম ম্যাকলাচলান বলেন, ‘সুয়েজ খাল বন্ধ হওয়া কনটেইনার শিপিংয়ে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। ছোট জাহাজগুলো সহজেই বৃহত্তর অর্থনৈতিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।’

 

শিপ মালিকরা এটি নিয়েও অনিশ্চিত, ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জনে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএমও) ও শিল্প নিয়ন্ত্রকরা কী ধরনের মানদণ্ড নির্ধারণ করবে। এটি ছোট জাহাজের তুলনায় বড় জাহাজ ব্যবহারকারীদের জন্য বেশি আশঙ্কার।

ছোট জাহাজের দিকে ঝুঁকছে শিপিং কোম্পানিগুলো